উখিয়ায় প্রযুক্তি দিয়ে ঠেকানো হচ্ছে বজ্রপাত

  বিশেষ প্রতিনিধি    23-10-2022    151
উখিয়ায় প্রযুক্তি দিয়ে ঠেকানো হচ্ছে বজ্রপাত

উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি অংশে বসানো হয়েছিল ১০০টি ‘আর্লি স্ট্রিমার ইমিশন এয়ার টার্মিনাল’ (ইএসইএটি)। সেখান থেকে পাওয়া গেছে সুখবর। গত দুই বছরে বেশকিছু বজ্রপাত ঠেকিয়ে দিয়েছে বজ্রপাত নিরোধক আধুনিক এ যন্ত্র। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এ যন্ত্রগুলো বসানোর উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।

সম্প্রতি দেশের উত্তরাঞ্চল, যমুনা অববাহিকা এবং হাওড় অঞ্চলের বজ্রপাতপ্রবণ ২১ জেলার কিছু জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে ইএসইএটি স্থাপন করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। এ যন্ত্রগুলোর মধ্যে আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বজ্রপাতের তথ্যপ্রাপ্তির সুবিধা রয়েছে ৮০টিতে। আইওটি সুবিধা ছাড়া ১৭০টি। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, আইওটি সুবিধা সংবলিত যন্ত্রগুলো বজ্রপাত ঠেকাতে সক্ষম। এর রয়েছে আরও বেশকিছু সুবিধা।

সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরে স্থাপিত ইএসইএটি যন্ত্রের রেকর্ডে দেখা যায়, চলতি বছরের ৯ অক্টোবর সেখানে সংঘটিত একটি বজ্রপাত ঠেকিয়েছে যন্ত্রটি। অন্যদিকে নেত্রকোনার পূর্বধলায় স্থাপিত ইএসইএটি ৫ সেপ্টেম্বর আরেকটি বজ্রপাত ঠেকিয়েছে। বজ নিরোধক ব্যবস্থায় একটি যন্ত্র ৮৭-১০০ মিটার বা ৩০০ ফুট এলাকায় নিরাপত্তা দিতে সক্ষম। পরীক্ষামূলকভাবে এখন পর্যন্ত পাবনা, কিশোরগঞ্জ, বগুড়া, সুনামগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, গাইবান্ধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকা, শরীয়তপুর, ফেনী, কুড়িগ্রাম, রাজশাহী, জামালপুর, হবিগঞ্জ, নওগাঁ, বগুড়া ও লালমানিরহাটের কিছু কিছু উপজেলায় বজ নিরোধক এ যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে।

‘ইমারজেন্সি মাল্টি সেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস’ প্রকল্পের আওতায় উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১০০ যন্ত্র স্থাপন করা হয়। এ প্রকল্পের পরিচালক জাবেদ করিম যুগান্তরকে বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ ইতোমধ্যে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সফলতা পেয়েছে। দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম ফ্রান্স এবং সুইডেন। আমরা উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থাপন করেছিলাম মাত্র ১০০টি যন্ত্র। সেখানে আরও ৬শ যন্ত্র বসানো দরকার। এসব থান্ডার প্রটেকশন সিস্টেমের প্রতিটিতে একটি করে ম্যানুয়াল কাউন্টার যুক্ত থাকে। বজ্রপাত হলে যন্ত্র সেটা ঠেকিয়ে দেয় এবং গণনা করে যে কতবার বজ্রপাত ঠেকানো হলো। আমাদের কাছে এর ভিডিও রয়েছে। এখনকার যন্ত্রগুলো আরও আধুনিক যেখানে আইওটি সিস্টেম আছে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যন্ত্রের কার্যকারিতা দেখভাল করা যায়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আতিকুল হক যুগান্তরকে বলেন, গত ৬ মাসে সারা দেশে বজ্রপাতে ২৮৪ জন মানুষ মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ২৭৬ জনই কৃষক। অপমৃত্যুর হাত থেকে মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া দরকার। আমরা পরীক্ষামূলকভাবে কিছু জায়গায় ইএসইএটি প্রযুক্তি স্থাপন করেছি। বিশ্বব্যাংক ও এলজিইডি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থাপন করেছে। আমাদের বিভিন্ন সংস্থাও যন্ত্রটি স্থাপন করেছে। এয়ারপোর্টে সিভিল এভিয়েশন হেভি ইকুইপমেন্টের নিরাপত্তার জন্য এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের পরামর্শে আমরা পরীক্ষামূলকভাবে এগুলো স্থাপন করেছি। তার মধ্যে আইওটি সুবিধা সংবলিত ইএসইএটি বজ্রপাত ঠেকাতে সক্ষম বলে পরীক্ষিত। ওই জায়গাগুলোতে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে যদি হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটে, তখন আবার আমরা এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করব।

মাঠপর্যায়ে আধুনিক বজ নিরোধক প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়াবিজ্ঞান বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এ উদ্যোগ নেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়াবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. তৌহিদা রশিদ যুগান্তরকে বলেন, আমাদের সম্ভাব্যতা যাচাইবিষয়ক গবেষণার মূল বিষয় ছিল কী কী পদক্ষেপের মাধ্যমে বজ্রপাতে মৃত্যু কমিয়ে আনা যায়। সেখানে আমরা বজ্রপাতের পূর্বাভাস ব্যবস্থা, সচেতনতা বৃদ্ধিকে গুরুত্ব দিয়েছি। এগুলোর মধ্যে আরেকটি বিষয় ছিল টেকনোলজিনির্ভর সমাধান। প্রচলিত নিয়মে কপারের মাধ্যমে যে ব্যবস্থা, তার কিছু অসুবিধা আছে। কপার চুরি বা খোয়া গেলে যন্ত্র কাজ করবে না। মনিটরিংয়ের অভাবে সেটা অনেক সময় বোঝার উপায় থাকে না। আইওটিনির্ভর বজ্রপাত নিরোধক ইএসইএটি ব্যবস্থাটি বেশ আধুনিক। বিশ্বের অনেক দেশ ব্যবহার করছে। এতে দ্রুততার সঙ্গে বজ্রপাত ট্রান্সমিট হয়ে ভূগর্ভে চলে যায়। এ বিষয়গুলোতে মনিটরিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রযুক্তিতে সহজেই ইনটারনেটের মাধ্যমে যন্ত্রের অবস্থা, কার্যকারিতা মনিটরিং করা যায়।

দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ইএসইএটি প্রযুক্তির যন্ত্রগুলোর কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে আইকনিক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের বিজনেস হেড শেখ হাসিনা আক্তার বলেন, আইওটি প্রযুক্তির সার্বক্ষণিক অনলাইন মনিটরিং সুবিধার মাধ্যমে বজ নিরোধক ব্যবস্থাপনার টেকসই উন্নয়ন ও প্রযুক্তির যুগপৎ ব্যবহার নিশ্চিত করছে। এক্ষেত্রে বিনিয়োগের দীর্ঘস্থায়ী সুফল পাবেন দেশবাসী। সুত্র: যুগান্তর

সারাদেশ-এর আরও খবর