বিএনপির দুর্গে ‘সুবিধায়’ আওয়ামী লীগ, লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি

  বিশেষ প্রতিনিধি    25-10-2022    172
বিএনপির দুর্গে ‘সুবিধায়’ আওয়ামী লীগ, লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি

বিএনপির দুর্গ হিসেবে খ্যাত সিলেট শহর। গত সিটি নির্বাচনেও জয়ী হন বিএনপির প্রার্থী। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখান থেকে আওয়ামী লীগের জয় বেশি। ‘সিলেট-১ যার ক্ষমতা তার’- সে হিসেবে এগিয়ে আওয়ামী লীগ। এন্টি আওয়ামী লীগ ভোট বেশি হলেও প্রার্থীর ইমেজ এখানে বড় ফ্যাক্ট। এখানকার ভোটাররাও যথেষ্ট সচেতন। শুধু দল নয়, দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করেও ভোট দেন তারা। তবে আওয়ামী লীগের আশীর্বাদ ৩৫ হাজারের মতো চা শ্রমিক ভোটার। জোট হলে জামায়াতের শক্তিশালী অবস্থান এগিয়ে দেবে বিএনপিকে। তাই লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি হবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

জাতীয় সংসদের ২২৯ নম্বর আসন সিলেট-১। সিলেট সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটি ঘুরে জানা যায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শ্বশুরবাড়ি সিলেট শহরে। এছাড়া জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের বাড়িও এখানে। জামায়াতের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন রয়েছে শহর ঘিরে। যে কারণে এই আসনে জোটের অবস্থা ভালো। তবে টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় সে চিত্র কিছুটা পাল্টেছে।

স্থানীয়রা বলছেন, এখানে দৃশ্যত সক্রিয় ও শক্তিশালী আওয়ামী লীগ। তবে বিএনপির নীরব ভোট বেশি। জামায়াতও সংঘবদ্ধ। বিএনপি-জামায়াতের ঐক্য হলে ভোটে তারাই এগিয়ে।

সিলেট-১ আসনে ভোটের অবস্থান জানতে সিলেট উপশহরে চা দোকানে বসে কথা হয় স্থানীয়দের সঙ্গে। আলোচনায় স্থানীয় আবুল কালাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন তো আওয়ামী লীগ বেশি। রাস্তা-ঘাট, পাড়া-মহল্লায় আওয়ামী লীগ। ভোটে তো দেখি বিএনপি পাস করে।’

তিনি বলেন, ‘এখানে আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিরও লোক আছে। জামায়াতও আছে। তারা নীরব। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে দুই দলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।’

কথা টেনে নিয়ে তরুণ সুমন বলেন, সংসদ নির্বাচনটা এখানে প্রার্থীর ওপর নির্ভর করে। যেমন গতবার আওয়ামী লীগের মোমেন সাহেব পাস করেছেন। তার সঙ্গে বিএনপির মুকিত সাহেব কিছুই না।

শ্রমিক রাসেল বলেন, আমরা তো চাই জনতার নেতা। যার কাছে যাওয়া যাবে, চাওয়া যাবে, তাকেই তো ভোট দেবো। এখনকার নেতাদের কাছে তো তাদের কর্মীদের কারণেই যাওয়া যায় না।

স্থানীয় এসব লোকের মতে, এখানে বর্তমানে আওয়ামী লীগেরই অবস্থা ভালো। বোনাস হিসেবে ৩০-৩৫ হাজার চা শ্রমিক ভোটার আছে নৌকার। তবে বিএনপির নীরব ভোটার আছে। বিএনপি জোটের শরিক জামায়াতও এখানে বেশ ভালো অবস্থানে। কারণ এ আসনটিতে সিলেটের সন্তান হিসেবে পরিচিত জামায়াতের বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমানেরও বেশ প্রভাব রয়েছে।

এখানে প্রার্থী যেই হোক, জয়ের জন্য লড়তে হবে। ভোটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। গত ছয় নির্বাচনের ফলাফলও তাই বলছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ জাগো নিউজকে বলেন, এখানে এন্টি আওয়ামী লীগের ভোট বেশি। জয়-পরাজয় প্রার্থীর ওপর অনেক সময় নির্ভর করবে, যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় বা বিরোধীদল যদি নির্বাচনে আসে।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, সিলেট-১ এ তো আমাদের মুহিত সাহেব পাস করলেন, এরপর ওনার ভাই মোমেন সাহেব পাস করলেন। এখনো অবস্থা মোটামুটি ভালো। প্রার্থী ভালো হলে ওভারকাম করতে পারবে। সিজনাল রাজনীতিবিদ কেউ পাইলে অসুবিধা হয়ে যাবে। সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মিল্লাত আহমদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, স্বাভাবিকভাবে আমাদের সিলেট-১ আসনে বিএনপির ভোট বেশি। তবে আগের তুলনায় আমাদের ভোট বাড়ছে। আগে তো আমাদের আরও নাজুক অবস্থা ছিল। এখন মোটামুটি আওয়ামী লীগ ৪০ শতাংশ, বিরোধী দলগুলো ৬০ শতাংশ। আগে আমাদের ৩০ শতাংশ ছিল, ওদের ৭০ শতাংশ ছিল। তবে এখন জনমত হলো- বিএনপি আবার এসে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, তার চেয়ে যেভাবে চলছে চলুক। গণতান্ত্রিকভাবে একটা সরকার আসুক, যেই আসুক। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক। তবে অনেক সাধারণ মানুষের মত হলো- বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগই ভালো। যেভাবে চলছে খারাপ না। ‘বিএনপির কিছু ছেলে উচ্ছৃঙ্খল। বিএনপি এলে তারা বেপরোয়া হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়। আমরা তো দেখছি- বিএনপির শাসনামলে বিমানবন্দর রোড, সিলেট বাইপাস, সুনামগঞ্জ বাইপাস সড়ক, চানপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রায় সময় ডাকাতি হতো। এখন বন্ধ হয়েছে। এগুলো মানুষের আস্থা বা সান্ত্বনা।’ সিলেট সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকা এবং সিলেট সদর উপজেলা নিয়ে জাতীয় সংসদের ২২৯ নম্বর আসন সিলেট-১। এখানে মোট ভোটার ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৫৩০। পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৮৬ হাজার ২৬৭ এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৫৭ হাজার ২৬৩। ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, যখন যে দল সরকার গঠন করেছে এই আসনে সেই দলের প্রার্থী জয়ী হয়েছে। দলের জোয়ার ও সরকার গঠনের সম্ভাব্যতা অনুমান করেই ভোট দেন এখানকার ভোটাররা। বিভিন্ন সময়ে হেভিওয়েট প্রার্থী থাকলেও ভোটের হিসাব-নিকাশে সরকার গঠনকারী দলেরই জয় হয়েছে। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এ কে আব্দুল মোমেন ২ লাখ ৯৮ হাজার ৬৯৬ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আব্দুল মুক্তাদির পান ১ লাখ ২৩ হাজার ৮৫১ ভোট। ১০ম সংসদ নির্বাচনে (২০১৪) আওয়ামী লীগের আবুল মাল আবদুল মুহিত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। ৯ম সংসদ নির্বাচনে (২০০৮) আওয়ামী লীগের আবুল মাল আবদুল মুহিত নৌকা প্রতীকে পান ১ লাখ ৭৮ হাজার ৬৩৬ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির এম সাইফুর রহমান ধানের শীষ প্রতীকে পান ১ লাখ ৪০ হাজার ৩৬৭ ভোট। ৮ম সংসদ নির্বাচনে (২০০১) বিএনপির এম সাইফুর রহমান পান ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮২৭ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের আবুল মাল আব্দুল মুহিত পান ৯৫ হাজার ৮৯ ভোট। ৭ম সংসদ নির্বাচনে (১৯৯৬) আওয়ামী লীগের হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী নৌকা প্রতীকে ৫৯ হাজার ৭১০ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এম সাইফুর রহমান ধানের শীষ প্রতীকে ৫৮ হাজার ৯৯০ ভোট পান। ৫ম সংসদ নির্বাচনে (১৯৯১) বিএনপির খন্দকার আবদুল মালিক ধানের শীষ প্রতীকে ৩৭ হাজার ৯০ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের ইফতেখার হোসেন শামীম নৌকা প্রতীকে ৩৫ হাজার ৪৭০ ভোট পান।

সারাদেশ-এর আরও খবর