সীমান্তে গৃহপালিত প্রাণীসম্পদ নিয়ে বিপাকে সদর ইউনিয়নের ৮ গ্রামের কৃষক

  বিশেষ প্রতিনিধি    12-11-2022    184
সীমান্তে গৃহপালিত প্রাণীসম্পদ নিয়ে বিপাকে সদর ইউনিয়নের ৮ গ্রামের কৃষক

সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণ এখন নিত্য দিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে নাইক্ষ্যং ছড়ি উপজে়লার সীমান্তর্বর্তী ৪৩ থেকে ৪৭ নম্বর পিলার এলাকায় এ ঘটনা ঘটছে ১৫ দিন। ফলে জামছড়ি থেকে বামহাতিছড়া পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার এলাকায় কোথাও না কোথাও এ বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটছে বর্তমানে।

সীমান্তের বাসিন্দা আবদুর ছালাম প্রতিবেদককে জানান, এ সীমান্তে গ্রাম রয়েছে ১২ টি। তন্মধ্যে ঝুঁকিতে আছে ৮ টি। এ গুলো হলো জামছড়ি, সাপমারাঝিরি, চেরারমাঠ, নুরুল আলম কোং বাগান এলাকা, কক্সবাজার পাড়া, জারুলিয়াছড়ি, ফুলতলী ও বামহাতির ছড়া। তারা এখন বিপাকে এ গৃহপালিত প্রাণীসম্পদ নিয়ে। এসব গ্রামের মানুষের ঘুম ভাঙ্গে এখন স্থল মাইন বিষ্ফোরণে। আগে ভাঙতো গোলাগুলির আওয়াজে।

নাইক্ষ্যংুছড়ি সদর ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণাধীন ৮ নম্বর ওয়ার্ড জামছড়ির বাসিন্দা মোঃ রহমান জানান সীমান্ত পিলার ৪৫ দিয়ে ভোর ৫টা ২৯ মিনিটের সময় ১টি বড় আকারের শব্দ করে মিয়ানমারে সামান্য ভিতর থেকে মাইন বিস্ফোরণের আওয়াজ এসে ঘুমন্ত মানুষের ভিতরে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তখন অনেক মানুষ প্রাণ ভয়ে বিভিন্ন দোয়া দরুদ পড়তে থাকে। আবার সকাল ৭টা ৩ মিনিটের সময় আরো একটি বড় শব্দ করে ৪৬,৪৭ সীমানা পিলারের মাঝখান দিয়ে আওয়াজ আসে। ফলে স্থানীয় অনেকেই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

চাকঢালা ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ ফরিদ জানান সকাল ১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১১টা পযর্ন্ত তিনি মোট তিনটি মাইন বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তবে আওয়াজ গুলো কত নাম্বার পিলার দিয়ে এসেছে সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেন নি। কারণ সব তো পাহাড়ি জনপদ।

সীমান্তের একাধিক সচেতন ব্যক্তি জানান, স্থলমাইন তাদের কাছে এখন বড় সমস্যা । গরু-ছাগল গুলো কখন গিয়ে আবার স্থলমাইনের কবলে পড়ে! কেননা চিরাচরিত নিয়মানুযায়ী তারা পাহাড়ে তাদের গরু-মহিষ-ছাগল চরতে দেয়। পাহাড়ী জঙ্গল বা ঘাস খেয়ে গরু-মহিষ গুলো গোয়ালে ফিরে আসে সন্ধ্যায় । এখন সে সুযোগ আর নেই।

স্থলমাইন তা বন্ধ করে দিয়েছে তাদের । কখন আবার তাদের গরু-মহিষ-ছাগল সেদিকে যায়, স্থলবিষ্ফোরণে মারা যায়।

এছাড়া ১১ বিজিবি জোয়ানরা সীমান্তে গরু-মহিষ- ছাগল বা স্থানীয়ভাবে চলাচলের গাড়ি যেতে বারণ করে রেখেছে কয়েক সপ্তাহ। এর আগে সাইনবোর্ড টাংগিয়ে সংযোগ সড়ক গুলো বন্ধ করে দেয় বিগত ৩ মাস। যেন সীমান্ত সড়ক বা জিরো পয়েন্টে লোকজন অবাধে ঘোরা-ফেরা না করে। তবে স্থানীয় গ্রামবাসীর নিতান্ত পারিবারিক কাজ করতে বাধা নেই এ সব স্পটে।

এ বিষয়ে বিজিবির কোন দায়িত্বরত কর্মকর্তা এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে রাজি না হলেও তাদের একটি সূত্র দাবী করেছে, তারা জনস্বার্থে অন্য গ্রাম বা স্থানের লোকজনকে সীমান্তে যেতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এ সাইনবোর্ড দেন। যাতে তারা নিরাপদ থাকে। সমস্যা সৃষ্টি না হয়। তা জনকল্যাণেই করা হয়েছে।

অপর দিকে সীমান্ত এলাকার সবচাইতে স্পর্শকাতর ৩৪, ৩৫ পিলার দিয়ে গত ৬ দিন পর্যন্ত কোন প্রকার বিস্ফোরণের শব্দ মিয়ানমার থেকে আসেনি বলে জানান তুমরুর ব্যবসায়ী মোঃ সরোয়ার আলম। তিনি বলেন, বিভিন্ন গোলাবারুদের শব্দ তাদের এলাকায় না আসাতে মানুষজন ক্রমান্বয়ে আতঙ্ক মুক্ত হচ্ছেন।

দৌছড়ি ইউনিয়নের সীমান্তের কাছাকাছি থাকা কৃষক মোঃ কামাল জানান তাদের বাড়ির কাছের ৫০ নম্বর সীমান্ত পিলার এলাকা শান্ত আছে বিগত ১২দিন। এখন সেখানে কিছু টা আতংক আছে কিন্ত গুলি বা স্থলমাইনের আওয়াজ নেই।

সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আবসার ইমন এ প্রতিবেদককে বলেন, গোলাগুলিতে এতো দিন মানুষ ছিলো একধরণের আতংকে। এখন আতংক স্থলমাইনের। সীমান্তের লোকজনের গরু-ছাগল এখন সীমান্তে গিয়ে মাইনের কবলে পড়বে এটা ভেবে নতুন করে বিপাকে পড়েছে সীমান্তবাসী।

সারাদেশ-এর আরও খবর