তালেবান শাসনে ভাল নেই আফগান মেয়েরা

  বিশেষ প্রতিনিধি    12-11-2022    195
তালেবান শাসনে ভাল নেই আফগান মেয়েরা

আফগানিস্তানের মেয়েদের জন্য কাবুলের বিনোন পার্কে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে গত বুধবার ( ০৯নভেম্বর)। একদিন পর বৃহস্পতিবার তালিবান সরকারের পক্ষ থেকে আর এক ফতোয়া জারী করে বলা হয়েছে, তারা শরীর চর্চা কেন্দ্রেও যেতে পারবে না।

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপি রয়াটার্স এবং আলজাজিরা এ খবর দিয়েছে।

তালিবানের নৈতিকতা বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, কোথাও ঘুরতে যাওয়ার সময় ইসলামের রীতি নীতি মেনে পোশাক পরছেন না মহিলারা। তাই পার্কে ঘোরা বন্ধ। জিমে যাওয়া বন্ধ ।

সরকারের এ মুখপাত্র বলেছেন, “গত ১৪-১৫ মাস পর্যন্ত শরিয়া অনুযায়ী দেশে একটা পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে। যাতে মহিলারা আমাদের সংস্কৃতি মেনে পার্কে যেতে পারেন।”

“কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, পার্কগুলির মালিক আমাদের সংস্কৃতি মানছেন না। একইসঙ্গে মহিলারা হিজাব পরছেন না। তাই আমাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে, মহিলারা পার্কে নিষিদ্ধ।” তিনি ইসলামিক শরিয়া অনুযায়ী, মহিলাদের পোশাকবিধি মানার কথা বলেছেন।

প্রসঙ্গত, আফগানিস্তানে সমস্ত মহিলাদের প্রকাশ্যে হিজাব পরতে হয়। তালিবানের দাবি, মহিলাদের সম্পূর্ণ শরীর এবং মুখ ঢাকা পোশাক বা বোরখা ছাড়া বাইরে বেরনো যাবে না। তবে দেখা যাচ্ছে রাজধানী কাবুল-সহ শহুরে এলাকায় অনেক মহিলাই মুখ ঢাকছেন না । তার বদলে কেউ কেউ সার্জিক্যাল মাস্ক পরে ঘুরছেন।

মেয়েদের হাইস্কুল খোলা নিয়ে নেতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে তালিবান। পশ্চিমি দুনিয়া মহিলা অধিকারের দিকে জোর দিতে তালিবান সরকারকে চাপ দিচ্ছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক মহলে তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে বিভ্রান্তিতে রয়েছে ।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানী কাবুলের পশ্চিম অংশে শিয়া মতালম্বী সংখ্যালঘু হেরাত সম্প্রদায়ের আবাসিক এলাকা দাস্তে-বারসিতে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আত্মঘাতি বোমা হামলায় অন্ততঃ ৫০ জন শিক্ষার্থী নিহত এবং আরো৮২ জন আহত হয়েছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির মেয়েদের সেকশনে এসেম্বলী হলে পরিচালিত এ হামলায় নিহতদের আধিকাংশই হচ্ছে মেয়ে। মেয়েদের স্কুলে এ হামলার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন একদল আফগান নারী। নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মহল ।

এর আগে ২০২০সালে এ এলাকায় ইসলামি স্টেট – এর এক বোমা হামলায় ৪২ জনশিক্ষার্থী নিহত হয়েছিল। তা ছাড়া ২০২১ সালের মে মাসে এই দাস্তে-বারসি এলাকাতে একটি স্কুলের কাছে হামলায় ৮৫ জন নিহত হয়েছিল।

২০২১ সালের আগষ্টে বিদেশি দখলদার সৈন্যর বিদায় নেবার পর আফগানিস্থানের ক্ষমতার দখল নেয় তালেবান সরকার । বিশ বছর সরকারে ফিরে এসে তালেবানগন ঘোষনা দিয়েছিল তারা নারীদের অধিকার ফিরিয়ে দেবে, বিশেষ করে নারীদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেবে।

এদিকে এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে শুক্রবারের আত্মঘাতি বোমা হামলার নিন্দা জানিয়ছে। সংস্থাটির দক্ষি এশিয়া বিষয়ক প্রচার আধিকারিক সামিরা হামিদি অভিযোগ করেছেন, তালেবানরা ২০ বছর পর আবারো ক্ষমতায় এসে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং নারীদের অধিকার রক্ষায় তেমন কিছুই করতে পারে নি।

ছাত্রীদের জন্য হাই স্কুল খুলেবার দাবী জনিয়েছেন নিমরোজ প্রদেশের উপজাতি নেতারা। তারা বলেছেন, বর্তমান অবস্থায় মেয়েদের শিক্ষা বঞ্চিত রাখা দেশের উন্নয়নের জন্য ক্ষতিকর। ইসলামিক শারিয়া অনুযায়ী মেয়েদের শিক্ষায় কোন বাধা নেই।

নিমরোজ প্রদেশের শিক্ষা পরিচালক গুল আহমেদ হাক্কানী বলেছেন, স্কুল খুলে দেবার ব্যাপার তারা প্রস্তুত হয়েই রয়েছেন। কেবল মাত্র উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশের অপেক্ষা।

উল্লেখ্যা, আফগানিস্থানে ষষ্ঠ শ্রেনী থেকে হাইস্কুলে মেয়েদের পড়াশুনা একবছরের বেশী সময় ধরে বন্ধ রয়েছে । কবে খুলবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই।

এদিকে, গতকাল ( ১০ নভেম্বর) জাতিসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়ে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিগন আফগান মেয়ে এবং নারীদের লেখাপড়া বন্ধ রাখা এবং বাইরে কাজ করতে না দেবার নীতির সমালোচনা করেছেন।

অধিবেশনে যোগ দিয়ে জাতিসংঘ প্রতিনিধি জানিয়ে দিয়েছেন, আফগানিস্তানের ইসলামী আমিরাত সরকার যদি আন্তর্জাতিক সমর্থন পেতে চায়, তাহলে তাদের কন্যা এবং নারীদের শিক্ষা ও চাকুরীর ক্ষেত্রে পুর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে হবে।

আন্তর্জাতিক-এর আরও খবর