কক্সবাজারের কলাতলী চত্বরে স্থাপিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য

  বিশেষ প্রতিনিধি    13-11-2022    192
কক্সবাজারের কলাতলী চত্বরে স্থাপিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য

অবশেষে কক্সবাজার সাগর পাড়ের কলাতলী গোলচত্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য স্থাপনের মধ্য দিয়ে কক্সবাজারবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হতে চলেছে। সেই ১৯৫৮ সাল থেকে সর্বশেষ ১৯৭৫ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়কালে প্রাণপ্রিয় স্থান কক্সবাজারে অন্তত ১৩/১৪ বার এসেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কক্সবাজারে জানা-অজানা অনেক স্মৃতি রয়েছে জাতির জনকের। স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দীকাল অতিবাহিত হলেও বঙ্গবন্ধুর নামে সাগর পাড়ের এই শহরে এখনো পর্যন্ত স্থাপিত হয়নি একটি স্মৃতিফলক।

অথচ কক্সবাজারের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে সাগর পাড়ের কলাতলী গোলচত্বরে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য স্থাপন করার জন্য। দৈনিক আজকের দেশবিদেশ পত্রিকা এ দাবিটি নিয়ে বার বার লেখালেখি করে আসছে। জনগণের দাবি হচ্ছে- কলাতলী গোলচত্বরটি বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজারের গেটওয়ে অর্থাৎ প্রবেশদ্বার। পর্যটন শহরটির এই প্রবেশদ্বার দিয়ে এমনও বিশেষ দিন রয়েছে যেদিন কয়েক লাখ পর্যটকেরও আগমন হয়ে থাকে। সাগর পাড়ের এই শহরটির প্রবেশদ্বারে যদি জাতির জনকের একটি ভাস্কর্য নির্মিত হয়ে থাকে তাহলে বাঙালির অবিসংবাদিত এই নেতার প্রতি কক্সবাজারবাসীর কিছুটা হলেও কৃতজ্ঞতা শোধ করা যায় বলে অনেকেই বলে আসছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে- এতকাল ভাস্কর্য নির্মাণে কেউই এগিয়ে তো আসেননি উল্টো সেই গোলচত্বরে হাঙ্গরের ভাস্কর্য বসানো হয়েছে। এ কারণে কলাতলী গোলচত্বরকে অনেকেই বলে থাকেন হাঙ্গর মোড় আবার অনেকেই বলেন ডলফিন মোড়। সেই হাঙ্গরের ভাস্কর্য অপসারণ করে স্থাপন করা হবে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য।

হাঙ্গর বা ডলফিন বসানোয় অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করে আসছেন। বলা হয়, হাঙ্গর বা ডলফিনকে অনেকেই ভয় করে থাকেন। এমন এক ভয়ভীতির প্রাণীর প্রতিচ্ছবি সেখানে স্থাপন করে কি বুঝানো হয়েছে এতকাল সেটাও অনেকেরই প্রশ্ন। তবুও মানুষের আবেগ আর চেতনার বিষয়টি বার বার থেকে কতবার বলা যায়? সর্বশেষ ২০১৫ সালে সাবেক জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেনের সভাপতিত্বে সৈকতের কবিতা চত্বরে অনুষ্ঠিত ১৭ মার্চ জাতির জনকের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠিত সভায় বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য স্থাপনসহ কলাতলী গোলচত্বরের নাম বঙ্গবন্ধু চত্বর রাখারও সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

এত লেখালেখি আর এত বলার ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া শেষ পর্যন্ত হলেও এবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার সেই কলাতলী গোলচত্বর এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন সরকারের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, অপারেজয় বাংলার সদস্য সচিব এইচ, রহমান মিলু ও কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহে আরেফীন প্রমুখ।

শনিবার রাতে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী গোলচত্বরে ভাস্কর্য নির্মাণের স্থানটি সরেজমিন পরিদর্শনসহ সম্ভাব্যতা পরিদর্শন করে গেছেন। যদিওবা স্থানটি প্রয়োজনের তুলনায় আকারে ছোট তবুও স্থানটি অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। জেলা প্রশাসক জানান, ভাস্কর্য স্থাপনের জন্য যেকোনোভাবে স্থানটির পরিধি আরেকটু বাড়ানো যায় কিনা সচিব মহোদয় তাও দেখতে বলে গেছেন।

কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহে আরেফীন গতরাতে জানিয়েছেন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব কলাতলী গোলচত্বরে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য স্থাপনের প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসাবে নকশাও অংকনের নির্দেশনা দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের জন্য কক্সবাজার পৌরসভা ও অপারেজয় বাংলা নামক সংগঠনটি যৌথভাবে অর্থায়নের প্রস্তাব দিয়েছে। সেই সঙ্গে সার্বিক সহযোগিতায় থাকবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

সারাদেশ-এর আরও খবর