কোন গাড়িতে কত টোল বঙ্গবন্ধু টানেলে

প্রস্তাবনা চূড়ান্ত

  বিশেষ প্রতিনিধি    07-01-2023    344
 কোন গাড়িতে কত টোল বঙ্গবন্ধু টানেলে

বঙ্গবন্ধু টানেলের কিছু চিত্র

আর মাত্র দুই মাস। এরপরই কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল দিয়ে শুরু হবে যান চলাচল। এর আগেই টানেল ব্যবহার করা ১২ ধরনের যানবাহনের জন্য টোল হার প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। কর্ণফুলীর শাহ আমানত সেতুকে বিবেচনায় নিয়ে এ টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছে। টোল হার নির্ধারণ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে বিশেষ কমিটি।

জানা গেছে, প্রস্তাবনায় চার এক্সেলের ট্রেইলারে সর্বোচ্চ টোল ধরা হয়েছে এক হাজার টাকা। প্রাইভেটকারের জন্য সর্বনিম্ন টোল ধরা হয়েছে ২০০ টাকা। এছাড়া মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ও থ্রি হুইলার টানেল দিয়ে চলাচল করতে পারবে না।

টানেলের প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ বলেন, টানেলের মূল কাজ শেষ। এখন সংযোগ সড়কসহ কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ের সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে।

সেতু বিভাগের উপসচিব (উন্নয়ন) আবুল হাসান বলেন, শাহ আমানত সেতুর টোল হার বিবেচনায় নিয়ে টানেলের টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। এ প্রস্তাবনা এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। সেখানে অনুমোদনের পর এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

২৫-এ চলবে ৩০ হাজার গাড়ি

টানেলের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার সুপারিশে বলা হয়েছে, শুরুতে গাড়ি চলাচলের সংখ্যা একটু কম থাকলেও ২০২৫ সালের দিকে গড়ে দৈনিক ২৮ হাজার ৩০৫টি গাড়ি চলাচল করবে। ২০৩০ সালে গিয়ে সেই সংখ্যা হবে ৩৭ হাজার ৯৪৬। আর ২০৬৭ সালে গিয়ে দাঁড়াবে এক লাখ ৬২ হাজারে।

সেতুর সঙ্গে বিবেচনায় টোল

২০১০ সালে ৪৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর ওপর শাহ আমানত সেতু নির্মিত হয়। শহরের প্রাণকেন্দ্রে সেতুটি নির্মাণ করায় সহজ হয় দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা। ফলে টানেলের টোল হার নির্ধারণ করতে গিয়ে এ সেতুকে বিবেচনায় আনে সেতু বিভাগ। প্রস্তাবিত টোল হারে শাহ আমানত সেতুর টোল হারও উল্লেখ করে তারা। সেতুর চেয়ে টানেলের নির্মাণ ব্যয় বেশি হওয়ায় টোলও সেভাবে নির্ধারণ করা হয়। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে গত ২০ ডিসেম্বর টানেলের টোল হার প্রস্তাব আকারে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায় সেতু বিভাগ। এর আগে ২৬ নভেম্বর টানেলের প্রথম টিউবের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কোন গাড়িতে কত টোলের প্রস্তাব

শাহ আমানত সেতুতে প্রাইভেটকার ও জিপের ক্ষেত্রে টোল আদায় করা হয় ৭৫ টাকা। এসব গাড়িকে টানেলে টোল গুনতে হবে ২০০ টাকা। একইভাবে সেতুতে পিকআপের ১৩০ টাকা টোলের বিপরীতে এখানে ধরা হয়েছে ২০০ টাকা। সেতুতে মাইক্রোবাসের টোল দিতে হয় ১০০ টাকা। টানেলে তা ধরা হয়েছে ২৫০ টাকা। ৩১ আসনের কম ধারণক্ষমতার বাস সেতুতে ৫০ টাকা টোল গুনলেও এখানে ৩০০ টাকা এবং ৩২ আসনের বেশি ধারণক্ষমতার বাসের ক্ষেত্রে ১৫৫ টাকার বিপরীতে ৪০০ টাকা টোল ধরা হয়েছে।

এছাড়া পাঁচ টন ধারণক্ষমতার ট্রাক সেতুতে ১৩০ টাকা দিলেও টানেলে ৪০০, পাঁচ থেকে আট টনের ট্রাক ২০০ টাকার বিপরীতে ৫০০, আট থেকে ১১ টনের ট্রাক ৩০০ টাকার বিপরীতে ৬০০, তিন এক্সেল পর্যন্ত ট্রাক ৮০০ ও চার এক্সেল পর্যন্ত ট্রেইলারে ৭৫০ টাকার বিপরীতে এক হাজার টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া গাড়ির এক্সেল বাড়লে এক্সেলপ্রতি অতিরিক্ত ২০০ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। আছে যত সম্ভাবনা

টানেলের একপ্রান্ত আনোয়ারায় সিইউএফএল, কাফকো, কোরিয়ান ইপিজেড, প্রস্তাবিত চায়না ইপিজেড, পারকি সমুদ্র সৈকত। আনোয়ারা দিয়েই বাঁশখালী, কক্সবাজার, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল এবং মীরসরাই ও ফেনীর সোনাগাজীর বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের সঙ্গে যোগাযোগের লক্ষ্যেই নেয়া হয় এ টানেল প্রকল্প।

সংশ্লিষ্টদের মতে, এটি চালু হলে ত্বরান্বিত হবে কর্ণফুলী নদীর পূর্বপ্রান্তের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়ন। পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, চট্টগ্রাম বন্দর-বিমানবন্দরের সঙ্গেও স্থাপিত হবে উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা। কমে যাবে ভ্রমণের সময় ও খরচ।

এছাড়া পূর্বপ্রান্তের শিল্পকারখানার কাঁচামাল ও প্রস্তুত করা মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দরসহ দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন প্রক্রিয়া সহজ হবে। কর্ণফুলী নদীর পূর্বপ্রান্তের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের ফলে বিকশিত হবে পর্যটনশিল্প।

অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল হোসেন বলেন, মীরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ চালু হলে এবং মাতারবাড়িতে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানা সচল হলে বঙ্গবন্ধু টানেলের ব্যস্ততা বাড়বে। টানেলটি ঘিরে দক্ষিণ চট্টগ্রামেও নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। এসবের প্রভাবে টানেলে চলাচলকারী যানবাহনের সংখ্যা বাড়বে।

সারাদেশ-এর আরও খবর