হুররাম সুলতান: বাস্তব জীবনেও সংগ্রামী অভিনেত্রী মেরিয়াম

  বিশেষ প্রতিনিধি    13-01-2023    157
হুররাম সুলতান: বাস্তব জীবনেও সংগ্রামী অভিনেত্রী মেরিয়াম

মেরিয়াম উজারলি

তুরস্কের বিশ্বখ্যাত টিভি সিরিয়াল ‘সুলতান সুলেমান’। বাংলায় ডাবিংকৃত এ সিরিজ বাংলাদেশের টেলিভিশনেও প্রচার হয়েছে। তুরস্কের ৬০০ বছরের অটোম্যান সাম্রাজ্যের অন্যতম সফল শাসক সুলতান সুলেমানকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে এই টিভি ধারাবাহিক।

ঐতিহাসিক এই সিরিজের অন্যতম প্রধান চরিত্র হুররাম সুলতান। আর এই চরিত্র রূপায়ন করেন তুরস্কের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেরিয়াম উজারলি। বিশ্বের অন্য দর্শকদের মতো বাঙালি দর্শকদের হৃদয়ও নাড়িয়ে দিয়েছেন ৩৯ বছর বয়েসী এই অভিনেত্রী। গল্পের হুররাম সুলতানের মতো বাস্তব জীবনেও সাহসী ও সংগ্রামী এক নারী মেরিয়াম।

বিশাল অটোমান সাম্রাজ্যের যে কয়জন নারীর ভালোবাসা, ব্যক্তিত্ব সুলতান সুলেমানের উপর প্রভাব বিস্তার করেছিলেন তাদের অন্যতম হলেন হুররাম সুলতান। কিন্তু হুররাম তোপকাপি প্রাসাদে প্রবেশ করেছিলেন একজন সাধারণ ক্রীতদাসী হিসেবে। ‘হুররাম’ তার নাম ছিল না। বরং সুলতান সুলেমান ভালোবেসে তাকে এই নামে ডাকতেন। ‘হুররাম’ শব্দের অর্থ ‘যে আনন্দ দেয়’। হুররামের মিষ্টি হাসি, ব্যক্তিত্ব বদলে দিয়েছিল সুলতানের জীবন।

অনেকের কাছে হুররাম বিপজ্জনক একজন নারী। যার সংস্পর্শে আসলে ধ্বংস অনিবার্য! নাটকীয় উত্থানে ভরা তার জীবন। সময়ের স্রোতে ভাগ্যাহত ক্রীতদাসী সুলতান সুলেমানের হারেমে ঠাঁই পান। অটোমানের ঐতিহ্য ভেঙে সুলতানকে বিয়ে করে সেই সময়ের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারীতে পরিণত হন তিনি। হুররাম চরিত্রের মতো মেরিয়াম উজারলির বাস্তব জীবনেও নানা ঘাত-প্রতিঘাত রয়েছে।

১৯৮৩ সালের ১২ আগস্ট জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেন মেরিয়াম উজারলি। তার বাবা তুরস্ক ও মা জার্মানির নাগরিক। সেই সূত্রে তিনি তুরস্ক ও জার্মানি দুই দেশেরই নাগরিক। তার শৈশব ও বেড়ে ওঠা জার্মানিতে। মাতৃভাষা জার্মান ছাড়াও তুর্কি ও ইংরেজি ভাষায় সাবলীল এই তারকা।

জার্মানিতে ছোট চরিত্রে কাজ করার মধ্য দিয়ে অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু করেন মেরিয়াম। ২০১০ সালে কয়েকটি জার্মানি টিভি সিরিজে কাজ করেন। একই বছর জার্মান চলচ্চিত্র ‘জার্নি অব নো রিটার্ন’ এবং ‘জেচ আবের বাইলে’-এ অভিনয় করে পরিচিতি লাভ করেন তিনি। ২০১১ সালে তুরস্কের ‘সুলতান সুলেমান’ ধারাবাহিকে অভিনয়ের ডাক পান। সিরিজটির পরিচালক-প্রযোজকের জরুরি আহ্বানে সাড়া দিয়ে জার্মান থেকে তুরস্কে চলে যান মেরিয়াম।

তুরস্কে সেভাবে বসবাস না করায় একটি হোটেলে উঠেন মেরিয়াম উজারলি। সেই হোটেলে টানা দুই বছর অবস্থান করে ‘সুলতান সুলেমান’ সিরিজের শুটিং করেন তিনি। রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে চিত্রনাট্য মুখস্থ করেছেন। এটি প্রচারে আসার পর তারকাখ্যাতি ধরা দেয় মেরিয়ামের হাতে; নজর কাড়েন বিশ্বজুড়ে।

তুরস্কে তেমন কোনো বন্ধু-বান্ধব ছিল না মেরিয়াম উজারলির। তখন জন আতেশ নামে এক তরুণের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু গর্ভবতী হওয়ার পর ছেলেটি তার স্ত্রী ও দুই সন্তানের কথা ভেবে দূরে সরে যেতে থাকেন। প্রেমিক জন মেরিয়ামকে গর্ভপাত করার পরামর্শ দেন। কিন্তু এই পরামর্শ মেনে নিতে পারেননি মেরিয়াম। বরং প্রচন্ড মানসিক আঘাত পান; শুরু হয় তার জীবনের আরেকটি টানাপড়েনের অধ্যায়।

গর্ভপাত না করিয়ে নিজের সন্তানকে পৃথিবীতে আনার সিদ্ধান্ত নেন মেরিয়াম। এজন্য ২০১৩ সালের মে মাসে আকস্মিকভাবে ‘সুলতান সুলেমান’ সিরিজে অভিনয় না করার মতো বড় সিদ্ধান্ত নেন এবং জার্মানিতে ফিরে যান। ২০১৪ সালের মে মাসে একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন মেরিয়াম; শুরু হয় সিঙ্গেল মাদারের যাত্রা। পরে হুররাম চরিত্রে আরেক অভিনেত্রীকে নিয়ে নেন নির্মাতারা।

অভিনয় দক্ষতা আর শরীরি সৌন্দর্যে মুগ্ধ মেরিয়াম ভক্তরা। জনপ্রিয়তার সুবাদে অসংখ্য বিজ্ঞাপন ও খ্যাতনামা ব্র্যান্ডের অ্যাম্বাসেডর হয়েছেন তিনি। এখন পর্যন্ত ৩০টির অধিক পুরস্কার জমা পড়েছে ‘হুররাম’খ্যাত এই অভিনেত্রীর প্রাপ্তির ঝুলিতে। বর্তমানে পরিবার ও কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন মেরিয়াম।

বিনোদন-এর আরও খবর