কে হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি, আলোচনায় আছেন যারা

  বিশেষ প্রতিনিধি    15-01-2023    229
কে হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি, আলোচনায় আছেন যারা

রাষ্ট্রপতি পদ হলো-দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদ। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে আগামী ২৩ এপ্রিল। নতুন করে কে রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন তা নিয়ে চলছে দেশজুড়ে আলোচনা। দেশের সব রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে।

এদিকে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চলতি মাসের শেষে তফসিল দিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে ভোট করতে চায় ইসি।

সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল প্রথমবার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি দ্বিতীয় মেয়াদেও দায়িত্ব পান। তৃতীয় মেয়াদে সংবিধান অনুযায়ী তার আর রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুযোগ নেই। ফলে ২৩ এপ্রিলের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে। সংবিধানের ৫০ অনুচ্ছেদ বলছে, একজন রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণ থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন। ৫০(৩) অনুচ্ছেদ বলছে, একাধিক হোক বা না হোক দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতি পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না। বর্তমান রাষ্ট্রপতি পরপর দুই মেয়াদে এ দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী ২৪ এপ্রিলের মধ্যেই পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নতুন কারো শপথ নেওয়ার কথা।

এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, নির্ধারিত সময়েই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে। বর্তমান রাষ্ট্রপতি দুই মেয়াদে থেকেছেন, সংবিধান অনুযায়ী আর থাকতে পারেন না। সেহেতু আমরা নতুন রাষ্ট্রপতি দেখব। বর্তমান রাষ্ট্রপতি (আবদুল হামিদ) কে তৃতীয় মেয়াদের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করতে হলে সংবিধান পাল্টাতে হবে। এখন পর্যন্ত সংবিধান পাল্টানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।

সূত্র আরও জানায়, রাষ্ট্রপতি হওয়ার আলোচনায় রয়েছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

এর মধ্যে রাষ্ট্রপতি হিসেবে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অনেক দিন ধরেই আলোচনায় রয়েছেন। বিশেষ করে আবদুল হামিদ দ্বিতীয় দফায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার নাম আলোচিত হচ্ছে। তিনি দ্বিতীয় দফায় স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নাম নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে আলোচনায় রয়েছে। তিনি পরপর তিন দফায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। সেই সঙ্গে মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করছেন দক্ষতার সঙ্গে।

নতুন রাষ্ট্রপতির সম্ভাব্য তালিকায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের নামও রয়েছে। তিনি তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিক। গাজীপুর-১ আসনের এমপি এবং গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। মন্ত্রিসভা সদস্যদের মধ্যে তিনি সিনিয়র।

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের নামও রাষ্ট্রপতি হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। তিনি টানা তিন দফায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য হন।

নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নাম শোনা যাচ্ছে। তিনি বর্তমানে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এদিকে রাষ্ট্রপতির হওয়ার দৌড়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নাম নেতাকর্মীদের মুখে শোনা গিয়েছিল। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি হওয়ার যোগ্যতা আমার নেই। প্রধানমন্ত্রী আলাপ-আলোচনা করছেন, খোঁজখবর নিচ্ছেন। সময় হলে জানতে পারবেন।

৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিধান রয়েছে সংবিধানে। রাষ্ট্রপতি সরাসরি ভোটে নয়, সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। তফসিল ঘোষণাসহ এ নির্বাচন পরিচালনা করে নির্বাচন কমিশন। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের মনোনীত প্রার্থীই হবেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারিতেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন, ১৯৯১ (১৯৯১ সালের ২৭ নম্বর আইন)-এর ৫ ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করবে ইসি। চলতি জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পর চূড়ান্ত করতে হবে রাষ্ট্রপতির নাম। বর্তমান জাতীয় সংসদের সংসদে সংরক্ষিত আসনসহ ৩৫০টি আসনের মধ্যে ৩০২টি আওয়ামী লীগের। জাতীয় পার্টির ২৬টি, ওয়ার্কার্স পার্টির ৪টি, জাসদের ২টি, বিকল্পধারার ২টি, গণফোরামের ২টি, তরীকত ফেডারেশনের ১টি, জাতীয় পার্টির (জেপি) ১টি এবং স্বতন্ত্র ৩টি আসন। বিএনপির ৭জন পদত্যাগ করায় সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব নেই। ওই সাত আসনে উপনির্বাচনের কার্যক্রম চলছে।

ফলে ক্ষমতাসীন দলটি যাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবে, তিনিই হবেন বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি।

যেভাবে হবে নির্বাচন: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এই নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন। সংসদ সদস্যরাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটার। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নির্বাচনী কর্মকর্তার সামনে নির্ধারিত ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর নাম ও নিজের স্বাক্ষর দিয়ে তা জমা দিতে হবে। এর মুড়ি অংশে স্বাক্ষর দিয়ে ভোটারদের ব্যালট পেপার সংগ্রহ করতে হবে। ভোট দেওয়ার পর সংসদকক্ষে স্থাপিত এক বা একাধিক ব্যাটল বাক্সে তা জমা দিতে হবে। প্রত্যেক সংসদ সদস্যের একটি মাত্র ভোট থাকবে। সংসদ সদস্য হিসেবে স্পিকারও এ নির্বাচনে ভোটার। ভোটের দিন গ্যালারিসহ সংসদকক্ষে প্রার্থী, ভোটার, ভোট নেওয়ায় সহায়তাকারী কর্মকর্তা ছাড়া সবার প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করবেন নির্বাচনি কর্মকর্তা। ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যে ভোট গণনা করবেন। সর্বাধিকসংখ্যক ভোটপ্রাপ্তকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হবে। আর সমান ভোট পেলে প্রার্থীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করা হবে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল অব. ফারুক খান বলেন, সবকিছুই দেশের সংবিধান অনুযায়ী চলছে। তাই যথাসময়ে, যথা নিয়মে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে। আগামী রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন এটা নিয়ে এখনো দলীয় ফোরামে কোনো আলোচনা হয়নি। আওয়ামী লীগ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকেই রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিবে।

এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্ন বলেন, রাষ্ট্রপতি পদে জাতীয় পার্টির প্রার্থী না থাকলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সমর্থন দেবে জাতীয় পার্টি। অবশ্য এর আগে দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। রাষ্ট্রপতি হিসেবে একজন পরীক্ষিত রাজনীতিককে চাই।

রাষ্ট্রপতি পদে আমলা চাই না। কেননা, রাজনৈতিক ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি হলে তিনি রাজনীতির ভাষা বুঝবেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকেই রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিবে। অবশ্যই একজন দক্ষ, সাহসী, মেধাবী ও পরীক্ষিত ব্যক্তিই প্রাধান্য পাবেন।

উল্লেখ্য, আবদুল হামিদ ১০ বছর ধরে রাষ্ট্রপতির পদে থাকা ছাড়াও দুই দফায় স্পিকার ছিলেন। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

জাতীয়-এর আরও খবর