রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় ম্যুরাল

  বিশেষ প্রতিনিধি    28-01-2023    203
রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় ম্যুরাল

রাজশাহী নগরীর সিঅ্যান্ডবি এলাকায় পাঁচ কোটি দুই লাখ টাকা ব্যয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সবচেয়ে বড় ম্যুরাল নির্মাণ

রাজশাহী নগরীর সিঅ্যান্ডবি এলাকায় পাঁচ কোটি দুই লাখ টাকা ব্যয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সবচেয়ে বড় ম্যুরাল নির্মাণ করা হয়েছে। জেলা পরিষদের জমিতে ম্যুরালটি নির্মাণ করেছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। ম্যুরালের উচ্চতা ৫৮ ফুট, মূল অংশের উচ্চতা ৫০ ফুট এবং ম্যুরালে ৪০ ফুট চওড়া বঙ্গবন্ধুর ছবি রয়েছে।

সীমানাপ্রাচীরের উভয় পাশে ৭০০ ফুটজুড়ে টেরাকোটার কাজ করা হয়েছে। গ্যালারি এবং ল্যান্ডস্কেপিং সুপার গ্রানাইট দিয়ে সুসজ্জিত। ম্যুরালে শোভাবর্ধক বৈদ্যুতিক বাতিসহ রাতের দৃষ্টিনন্দন আবহ তৈরি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘ম্যুরালটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন, কর্ম এবং দেশের স্বাধীনতায় প্রশংসনীয় অবদান ও ত্যাগ সম্পর্কে জানতে মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।’

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির একপাশে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যের লোকজ সংস্কৃতির নানা চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। অপরদিকে ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে। গ্যালারি ল্যান্ডস্কেপিংয়ে উন্নত গ্রানাইট দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। উদ্বোধন শেষে সুসজ্জিত বৈদ্যুতিক বাল্ব দিয়ে নাইট ভিশন করা হবে।

রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম বলেন, ‘এটি দেশে বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় ম্যুরাল। এটি নির্মাণ করেছেন আমিরুল ইসলাম। ল্যান্ডস্কেপিং কাজের তত্ত্বাবধানে ছিলেন স্থপতি আবির রহমান। এটির ফাউন্ডেশনে ২২টি পাইলিং করা হয়েছে। বাউন্ডারি ওয়ালের দুই পাশে ৭০০ বর্গফুট টেরাকোটার কাজ করা হয়েছে।’

রাসিকের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহরিয়ার পরাগ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ম্যুরালটির উদ্বোধন করবেন। এটি আমার জন্য অনেক গর্বের বিষয়। রাজশাহীতে আরও অনেক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। যার সঙ্গে আমি যুক্ত ছিলাম। কিন্তু এই উন্নয়ন প্রকল্পটি ভিন্ন। এটি আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল। যা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে, তখন আমার গর্ব হয়। আনন্দে বুক ভরে ওঠে।’

এদিকে, বিশেষ করে শিশুদের বিনোদনের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের লক্ষ্যে নগরীতে শেখ রাসেল শিশু পার্কের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে ছোটবনগ্রাম এলাকায় ২.১৪ একর জমির ওপর একটি সময়োপযোগী ডিজাইনের মাধ্যমে নজরকাড়া ও আকর্ষণীয় অবয়ব দেওয়ার জন্য পার্কটি স্থাপিত হয়েছে। পার্কে রয়েছে ব্রিজ, উন্মুক্ত মঞ্চ, হাঁটার পথ, কৃত্রিম পাহাড়সহ বিভিন্ন আধুনিক রাইড এবং কার্যকর নিরাপত্তা। রাজশাহীবাসী পার্কটিতে নতুন স্থাপত্যের দৃশ্য পাবেন এবং যা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে অবদান রাখবে। সব বয়সের মানুষ এতে উপকৃত হবেন।

যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচল দ্রুত ও নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে সিটি করপোরেশন বিলসিমলা রেলওয়ে ক্রসিং থেকে সিটি হাট রোডকে চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। প্রায় ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে চার ফুট প্রশস্ত সড়ক ডিভাইডারসহ রাস্তাটিকে ৮০ ফুট চওড়া করা হচ্ছে। তিন দশমিক ৫৩২ কিলোমিটার সড়কের উভয় পাশে ৪৪ ফুট সড়ক, ১২ ফুট প্রশস্ত ড্রেন ও ফুটপাত এবং ধীরগতির যানবাহনের জন্য ২০ ফুট সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও একটি রাস্তাকে স্মার্ট সড়কে উন্নীত করা হচ্ছে।

নগরীর নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল থেকে ভদ্রা রেলওয়ে ক্রসিং পর্যন্ত ৪ দশমিক ১৭ কিলোমিটার রাস্তাটিকে ডাবল লেন থেকে চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে এবং ধীরগতির যানবাহন, বিভাজক, ড্রেন এবং উভয় পাশে ফুটপাতের জন্য অতিরিক্ত দুটি লেনের সঙ্গে চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। এলিভেশন কাজের পাশাপাশি উত্তর-দক্ষিণ সংযোগ সড়কের সৌন্দর্যবর্ধন ও সবুজায়ন করা হবে শোভাবর্ধক গাছপালা রোপণের মাধ্যমে।

সামগ্রিকভাবে রাস্তাটি আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতির পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনবে। মোহনপুর রেলক্রসিংয়ে ৪০ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। রাস্তার আশপাশের এলাকা, বিশেষ করে ফ্লাইওভারটিকে পর্যটন স্পট হিসেবে দেখা হয়। কারণ প্রচুর লোকসমাগম হয়। এতে স্থানীয়দের অনেকের জন্য আয় বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

উন্নয়নকাজের সার্বিক অগ্রগতির বিষয়ে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের আলিফ লাম মীম ভাটা ক্রসিং থেকে রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের ছোটবনগ্রাম, মেহেরচন্ডী, বুধপাড়া ও মোহনপুর হয়ে ছোটোপায়া ক্রসিং পর্যন্ত প্রায় ১৮৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পূর্ব-পশ্চিম সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ৬ দশমিক ৭৯৩ কিলোমিটার রাস্তার উভয় পাশে ফুটপাত নির্মাণের পাশাপাশি, রেলক্রসিংয়ের ওপর ফ্লাইওভার, ব্রিজ, আটটি কালভার্ট এবং মাঝামাঝিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনভিত্তিক আধুনিক অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। নবনির্মিত চার লেনের সড়কটি মহানগরীর ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকা যানজট নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।’

১৩১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে কল্পনা সিনেমা হল ক্রসিং থেকে তালাইমারী ক্রসিং পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার রাস্তা চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে জানিয়ে মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘রাস্তার দুই পাশে রঙিন সড়কবাতি বসিয়ে সুসজ্জিত ও পথচারী উপযোগী ফুটপাত নির্মাণ করা হয়েছে। সুশোভিত ফুলের চারা রোপণের মাধ্যমে সড়কদ্বীপের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রায় ১৩.৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে রেন্টুর খরির আড়ত থেকে ধলুর মোড় হয়ে হাইটেক পার্ক পর্যন্ত কার্পেটিং রাস্তা, ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণ এবং কোর্ট থেকে শহরতলী ক্লাব পর্যন্ত ডি কার্পেটিং রাস্তা করা হয়েছে। প্রায় ১২৬.৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে উপশহর থেকে সোনাদিঘি ক্রসিং এবং মালোপাড়া ক্রসিং থেকে সাগরপাড়া ক্রসিং পর্যন্ত দুটি মিডটাউন রাস্তা প্রশস্ত করা হয়েছে, যা শহরের যোগাযোগের ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছে।’

রাজশাহী সিটি করপোরেশন এ পর্যন্ত প্রায় ২১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট পাঁচটি পৃথক সড়ক ও রাস্তায় ৬৯৫টি খুঁটিতে ১ হাজার ৬৫৪টি সুসজ্জিত ও দৃষ্টিনন্দন বাতি স্থাপন করেছে। এছাড়াও ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ক্রসিং আধুনিক আলোক ব্যবস্থার আওতায় আনা হয়েছে।

সামগ্রিকভাবে, ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজের মধ্য দিয়ে রাজশাহী মহানগরী নতুন রূপ পেয়েছে এবং আধুনিক সড়কবাতি নগরবাসী ও অন্যান্য সুবিধাভোগীদের জন্য স্বস্তি বয়ে এনেছে।

গত কয়েক বছরে নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রায় ২৯৫ দশমিক ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করেছে রাসিক।

সারাদেশ-এর আরও খবর