রাষ্ট্রপতি হতে চান জগদীশ, কয়েকদিন ধরে ঘুরলেও মনোনয়নপত্র কিনতে পারেননি

  বিশেষ প্রতিনিধি    01-02-2023    263
রাষ্ট্রপতি হতে চান জগদীশ, কয়েকদিন ধরে ঘুরলেও মনোনয়নপত্র কিনতে পারেননি

দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনে ঘুরছেন কক্সবাজারের বাসিন্দা জগদীশ বড়ুয়া পার্থ।

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) গায়ে কালো পাঞ্জাবি আর চাদর চাপিয়ে নির্বাচন ভবনের পাশে ঘুর ঘুর করতে দেখা যায় তাকে। কয়েকদিন ধরে ঘুরলেও মনোনয়নপত্র কিনতে পারেননি জানিয়ে জগদীশ বলেছেন, মনোনয়নপত্র পেতে প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাবেন তিনি।

গত ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তফসিল অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। যাচাই-বাছাই হবে ১৩ ফেব্রুয়ারি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৪ ফেব্রুয়ারি। আর ভোটগ্রহণ হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি।

এই নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে অংশ নিতে ২৫ জানুয়ারির পর থেকেই ইসিতে মনোনয়নপত্র কিনতে ঘুরছেন জগদীশ। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার আবেদনপত্র গৃহীত হয়নি।

সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হতে হলে বয়স ৩৫ বছরের বেশি হতে হবে। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে। এছাড়া থাকতে হবে একজন করে প্রস্তাবক ও সমর্থক।

আবেদনপত্র হাতে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে জগদীশ বড়ুয়া পার্থ বলেন, ‘আমাদের ২১তম রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সেই সুবাদে তফসিল ঘোষণা করছেন আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে এখানে ২৫ তারিখের পর বারবার এসে দেখতে পাচ্ছি, আমাকে মনোনয়ন ফরম দিচ্ছে না। তারা আমার আবেদন গ্রহণ করছে না। আমি একজন রাষ্ট্রপতি প্রার্থী।’

নিজেকে বাংলাদেশ মঙ্গল পার্টির চেয়ারম্যান পরিচয় দেয়া জগদীশ দাবি করেন, তিনি এর আগে জেলা পরিষদ নির্বাচন করেছেন। ঢাকা-৮ আসনে সংসদ সদস্য পদেও নির্বাচন করেছেন।

নির্বাচন কমিশন থেকে অনলাইনে আবেদনের জন্য বলা হয়েছে উল্লেখ করে জগদীশ বলেন, ‘অনলাইনে গিয়ে দেখছি ভুয়া। তফসিলে যে টিঅ্যান্ডটি নম্বর দিয়েছে, সেই নম্বরে অনেক ফোন দিয়েছি, পাওয়া যায় না। আজকে আসছি আবেদন নিয়ে।’

এই মনোনয়নপ্রত্যাশী বলেন, ‘(নির্বাচন কমিশনের) জনসংযোগ শাখার (সহকারী পরিচালক) আশাদুল হককে কল দিলে তিনি বলেন বাইরে থাকেন, সবসময় মিটিংয়ে থাকেন। একবার বাইরের অভ্যর্থনা কক্ষে পাঠায়, একবার ভেতরের অভ্যর্থনা কক্ষে পাঠায়। এদিকে ফোনও রিসিভ করছে না তারা। রিসিভ করলে সমস্যা কোথায়? আমি কি নির্বাচিত হয়ে যাচ্ছি?’

প্রতিবেশী দেশ ভারতে দলিত সম্প্রদায় থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে জগদীশ বলেন, ‘আমি বড়ুয়া সম্প্রদায় থেকে এই বাঙালি জাতিকে রক্ষা করার জন্য মঙ্গল ধর্মের প্রবর্তক হিসেবে আমার অধিকার আছে ভালো কথা বলার জন্য। আমি নিজের জমি বিক্রি করে রাজনীতি করি। কারও ধার ধারি না।’

কতিপয় এমপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর থেকে তারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন। সেই রকম ভোট একটাও লাগবে না। আমাকে যে ভোট দেবে এরকম ভোট আমি দেখছি না।’

নির্বাচন কমিশন মনোনয়নপত্র না নিলে সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবেন জানিয়ে জগদীশ বলেন, ‘এরা যদি রিসিভ না করে, তাহলে আমি হাইকোর্টে যাব। আমার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছি, আমি মামলার পর্যায়ে যাব। যেমন হিরো আলম একতারা প্রতীক নিয়ে (বগুড়ার দুই আসনে) উপনির্বাচনে গেছে। ঠিক তেমনিভাবে আমি যাব।’

নিজেকে নির্বাচনপ্রিয় মানুষ দাবি করে জগদীশ বলেন, ‘আমি ২০১১ সাল থেকে নির্বাচন করি। আইনি জটিলতা যেটা আছে, এজন্য অবশ্যই আমি লড়াই করব।’

নির্বাচনে তার ইশতেহার তুলে ধরে জগদীশ বলেন, ‘বাংলাদেশে ১০ কোটি টাকার ওপরে যারা মালিক আছেন, তাদের টাকা বাজেয়াপ্ত করার কথা থাকবে আমার ইশতেহারে। বাংলাদেশে যত খাসজমি আছে, সেগুলো মাথাপিছু ৫ শতাংশ করে দান করবো।’

এ বিষয়ে ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক আশাদুল হক বলেন, ‘উনি আমার কাছে এলে তো হবে না। এ জন্য নির্বাচনী কর্মকর্তা সিইসির দপ্তরে যেতে হবে। আমার কাছে চাইলে তো হবে না। আমার সঙ্গে উনার দেখা হয়নি। আমি বলেছি নির্বাচনী শাখায় যোগাযোগ করেন।’

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, ‘বিষয়টি আমার নলেজে (জানা) নেই। কালকে গেলে খোঁজ নেবো। কে বা কারা বাধার সৃষ্টি করেছে। তবে আইনগতভাবে কোনো বাধা নেই, যদি আইন অনুযায়ী হয়, তাহলে যে কেউ মনোনয়ন ফর্ম কিনতে পারবে।’

বিএনএ

সারাদেশ-এর আরও খবর