শৃঙ্খলা ফিরেছে কক্সবাজারের পর্যটক সেবায়

  বিশেষ প্রতিনিধি    05-09-2022    189
শৃঙ্খলা ফিরেছে কক্সবাজারের পর্যটক সেবায়

বিশেষ প্রতিবেদক নানান অনিয়ম ও ট্যুরিস্টদের জীবন রক্ষায় শৃঙ্খলা ফেরাতে কক্সবাজারে কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। একই সাথে পর্যটকবান্ধব করতে মাস্টারপ্ল্যানও তৈরি করা হয়েছে। পর্যটকরা কক্সবাজারে এসে যাতে কোন হয়রানির শিকার না হয়েই আবার নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে সে লক্ষ্যে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সব খাতকে ট্যুরিস্ট পুলিশের মাস্টারপ্ল্যান এর আওতায় আনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে অনিরাপদের ডেরা হিসেবে পরিচিত কটেজ জোনে ফিরেছে শৃঙ্খলাও। সমুদ্রসৈকতে বসা চেয়ার—ছাতার দূরত্ব বজায় রাখায় নিরাপদে বালিয়াড়িতে হাঁটছে পর্যটকরা। কটেজ মালিকরা জানিয়েছে— দীর্ঘদিন ধরে অপরাধের ডেরা হিসেবে পরিচিত ছিল লাইট হাউজস্থ কটেজ জোন। কয়েকজন ভাড়াটিয়ার কারণে প্রকাশ্যে পতিতা ব্যবসা, মাদক সেবন, পর্যটক আটকে চাঁদা আদায়সহ নানান হয়রাণি চলত কটেজ জোনে। কিন্তু গত একমাস ধরে এসবের পরিবর্তন এসেছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের সঠিক পরিকল্পনা ও কাজের বাস্তবায়নের কারণে এসব অপরাধ এখন বন্ধ। দালালের উৎপাত নেই বললে চলে। সৈকতের কিটকট (চেয়ার—ছাতা) মোহাম্মদ রানা বলেন, সৈকতের বালিয়াড়িতে চেয়ার ছাতার তেমন শৃঙ্খলা ছিল না। যার যেমন ইচ্ছা বালিয়াড়িতে বসাত। এতে পর্যটকরা সহজেই সমুদ্র উপভোগ করতে পারত না। স¤প্রতি সময়ে চেয়ার ছাতায় শৃঙ্খলা ফিরেছে। ৫ ফুট দূরত্ব নির্ধারণ করায় সহজে সাগরে নামতে পারছে পর্যটকরা। কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী বলেন, কক্সবাজার পর্যটন এলাকা। ট্যুরিস্ট পুলিশ বেশ ভাল কাজ করছে। পর্যটন বাদ দিয়ে আমাদের কিছু করার সুযোগ নেই। অটোচালকদের পরিচিতি কার্ড দিলে পর্যটন শহরে অপরাধ অনেকাংশে কমে যাবে। ট্যুরিস্ট পুলিশের ওয়েব পোর্টাল করা হলে পর্যটকদের জন্য সুবিধা হবে। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, সমুদ্রসৈকতে আগে কিটকট গুলো দুরত্ব বজায় না রেখে বসিয়েছিল। আমরা পদক্ষেপ নিয়ে এক কিটকট থেকে আরেক কিটকটের দূরত্ব ৫ফুট করে বসিয়েছি। অবৈধ কর্মকান্ড বন্ধ করতে হোটেল মোটেল জোনে স্পা সেন্টারে মালিক, কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে বৈঠক করা হয়েছে। একই সাথে তাদের এইডস সচেতনতা মূলক কর্মশালা করা হয়। কলাতলী এলাকায় বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং রয়েছে; তাদের প্রতিহত করতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। এরই মধ্যে আমরা বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং সদস্য আটক করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ট্যুরিস্টদের সাহায্যের জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ ওয়েব সাইট করবে। যেখানে ট্যুরিজমখাতে সব ধরনের সেবা পাওয়া যাবে। পর্যটন এলাকায় অনুমোদিত অটোরিকশা থেকে বাঁচায় করে কিছু অটোরিকশা চালকদের প্রশিক্ষণ করে তাদের পর্যটনবান্ধব বাহন হিসাবে ঘোষনা করা হবে। এখানে যারা আসে সবাই বাইরে থেকে আসে। এখানে একটু গ্রুপ আছে; যারা এই পর্যটকদের ইভটিজিং করে। তাদের সেবা প্রদান করা হবে এবং যেসব কিশোর রাত ১২টার পরে ঘুরাফেরা করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ফটোগ্রাফার, অটোচালক, ও ট্যুরিজম ব্যবসায় জড়িত অনেকেই আছে তাদের কথা পর্যটনবান্ধব নয়। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে যেন পর্যটকদের সাথে ভাল ব্যবহার করে। পর্যটন সম্পর্কিত সকল স্টক হোল্ডারদের আইডি কার্ড ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। বীচ হারানো ও দলছুট শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। অনেক সময় পর্যটকরা অসচেতন হয়ে হাজারো পর্যটকদের ভিড়ে তার শিশু সন্তানদের হারিয়ে ফেলে। তাদের ট্যুরিস্ট পুলিশ সহায়তা করতে চাইলে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। যার কারণে শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র করা হচ্ছে। যেখানে শিশুদের নিরাপদে পরিচর্যা করা হবে এবং পরবর্তীতে অভিভাবককে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়া সমুদ্র সৈকতে বাচ্চা শিশুদের নিয়ে ঘুরতে আসেন অনেক মা। তারা সন্তানদের গর্বের দুধ খাওয়াতে অনেক সমস্যায় পড়েন। কারণ সৈকতে সবসময় পর্যটকের ভিড় থাকে। যার কারণে মা পর্যটকদের এ সমস্যা সমাধানে ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টার স্থাপন করা হবে। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো. জিললুর রহমান বলেন, পর্যটনের উন্নয়নে সবার পজিটিভ মানসিকতা লালন করা উচিত। পর্যটনের ক্ষতি মানে সবার ক্ষতি। ট্যুরিস্ট পুলিশ ও ট্যুরিজম খাতে জড়িত সবার সাথে সমন্বয় রেখে আমরা কাজ করছি।

পর্যটন-এর আরও খবর