প্রথম দিন ৯০ রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই

  বিশেষ প্রতিনিধি    16-03-2023    149
প্রথম দিন ৯০ রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই

প্রত্যাবাসনে তালিকাভুক্ত সোয়া ৪শ রোহিঙ্গার তথ্য যাচাইয়ে কক্সবাজারের টেকনাফে এসেছে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল। বুধবার বেলা সোয়া ১১টায় টেকনাফ স্থলবন্দর এলাকার একটি ভবনে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার শুরু হয়। প্রথম দিন ২৮টি পরিবারের ৮০-৯০ জন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেছে তারা। সবার তথ্য যাচাইয়ে ৫-৬ দিন লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের প্রতিনিধিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

নিজদেশ মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। আন্তর্জাতিক চাপে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আর শুরু হয়নি। তবে, ২০১৯ সালে দু’দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে তখন ফিরতে রাজি হননি রোহিঙ্গারা। এরপরও আশ্রিতদের ফেরত পাঠাতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার প্রস্তুতির অংশ হিসাবে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল এসেছে।

সকাল সোয়া ১০টার দিকে স্পিড বোটে মিয়ানমারের ৫ নিরাপত্তাকর্মী ও টেকনিক্যাল টিমের ১৭ সদস্য মিলে ২২ জনের প্রতিনিধি দল টেকনাফ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটি ঘাটে পৌঁছান। বৈঠক শুরু হলে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আসা ৫ নিরাপত্তাকর্মী মিয়ানমার ফিরে গেছেন।

জানা যায়, টেকনাফ স্থল বন্দরের অভ্যন্তরে মালঞ্চ সম্মেলন কক্ষে রোহিঙ্গাদের তথ্য যাচাই-বাছাই কাজ শুরু হয়। এতে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্সের মংডুর আঞ্চলিক পরিচালক অং মাইউ’র নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল এবং বাংলাদেশের পক্ষে ছিল কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) অতিরিক্ত কমিশনার মুহাম্মদ সামছু-দ্দৌজার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সাক্ষাৎকার চলে।

সূত্র জানায়, মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি টেকনাফে অবস্থানকালে প্রত্যাবাসনের জন্য তালিকাভুক্ত ৪২৯ জন রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই-বাছাই করছে। একই সঙ্গে আলাপ করা হচ্ছে রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে সম্প্রতি জন্ম নেওয়া শিশুদের তথ্যও নথিভুক্ত করার বিষয়। এর আগে প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ ৮ লাখ ৬২ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারের কাছে পাঠিয়েছিল। ওই তালিকা থেকে প্রাথমিকভাবে এক হাজার ১৪০ জনকে বাছাই করে মিয়ানমার। এর মধ্যে ৭১১ রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমারের সম্মতি মিললেও বাকি ৪২৯ জনের ব্যাপারে মিয়ানমারের আপত্তি ছিল। সেই ৪২৯ জন রোহিঙ্গার তথ্য যাচাইয়ের জন্যই টেকনাফে এসেছে মিয়ানমার প্রতিনিধি দল।

টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের (ক্যাম্প-২৫) মাঝি নুরুল আমিন বলেন, লেদা-নয়াপাড়া ক্যাম্পের অবস্থান করা ২০-২৫ পরিবারের ৫০-৬০ জন রোহিঙ্গাকে ধাপে ধাপে টেকনাফ স্থলবন্দরের ভেতরে রেস্ট হাউজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের ক্রমান্বয়ে নেওয়া হয় প্রতিনিধিদের সামনে। সাক্ষাৎকার দিয়ে ফেরা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। মিয়ানমার প্রতিনিধি দল তাদের কাছ থেকে জানতে চেয়েছে, তারা নিজ দেশে (মিয়ানমার) ফিরতে চান কি না? জবাবে রোহিঙ্গারা বলেছেন, রোহিঙ্গা হিসাবে মর্যাদায় পূর্ণ নাগরিক অধিকার, নিরাপত্তা, জায়গাজমি দিলেই তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবেন। আগে মিয়ানমারে অবস্থানের কোনো প্রমাণ রয়েছে কি না, প্রতিনিধি দল এমনটি জানতে চাইলে রোহিঙ্গারা জানায়, মিয়ানমানের সিলযুক্ত কাগজপত্র রয়েছে তাদের।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো রোহিঙ্গাদের তালিকা যাচাই-বাছাই করতে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলতে ৬ দিনের সফরে এসেছে। প্রথম দিনে ৮০-৯০ জন তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গার সঙ্গে প্রতিনিধি দল কথা বলেছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সরকার রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগে ছিল আরও ৪ লাখ রোহিঙ্গা। এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গা।

সারাদেশ-এর আরও খবর