কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বৃষ্টির ফোটায় পুরো পিচ্ছিল : দুর্ঘটনা ও দীর্ঘ যানজট

  বিশেষ প্রতিনিধি    20-03-2023    159
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বৃষ্টির ফোটায় পুরো পিচ্ছিল : দুর্ঘটনা ও দীর্ঘ যানজট

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ট্রাক থেকে ঝরে পড়া মাটির প্রলেপের উপর বৃষ্টি পড়ায় পিচ্ছিল হয়ে গেছে ।

সাতকানিয়ার কেরানীহাট থেকে মৌলভীর দোকান পর্যন্ত পিচ্ছিল সড়কে গাড়ি চালাতে গিয়ে অনেকে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। সড়ক থেকে ছিটকে পড়েছে অনেক গাড়ি। সড়ক পিচ্ছিল হয়ে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। সড়কে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত টানা ৪ ঘণ্টা যানজট ছিল।

এতে করে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। অনেক যাত্রী দীর্ঘক্ষণ পায়ে হেঁটে গাড়ি পাল্টিয়ে গন্তব্যে গেছে। দীর্ঘদিন যাবৎ আবাদি জমির মাটি কেটে ইট ভাটায় নেয়ার সময় সড়কের উপর ট্রাক থেকে ঝরে পড়া মাটির প্রলেপ তৈরি হয়। রবিবার (১৯ মার্চ) সকালে মাটির প্রলেপের উপর বৃষ্টির ফোটা পড়ার সাথে সাথে পুরো সড়ক পিচ্ছিল হয়ে যায়।

সরেজমিন পরিদর্শনকালে যানবাহন চালক, যাত্রী ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ইটভাটা মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে ২০-২৫টি মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট আবাদি জমি থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করে আসছে। মাটি ব্যবসায়ীরা আবাদি জমি থেকে স্কেভেটর দিয়ে ৩৫-৪০ ফুট গভীর করে মাটি কেটে ইট ভাটায় বিক্রি করছে। এসব মাটি বিল থেকে ট্রাকযোগে ইটভাটায় নেয়ার সময় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের উপর ঝরে পড়ে। দিন রাত সমান তালে ট্রাক থেকে ঝরে পড়া মাটি সড়কের উপর প্রলেপ তৈরি করে। বিশেষ করে আবাদি জমির নিচের অংশের নরম মাটি সড়কের উপর পড়ার পর যান চলাচলের ফলে সড়কে শক্ত প্রলেপ তৈরি করে।

এছাড়া মাটির প্রলেপের উপর লবণবাহী ট্রাক থেকে লবণ পানিও ঝরে পড়ে। লবণযুক্ত মাটির প্রলেপের উপর বৃষ্টি পড়ার সাথে সাথে পুরো সড়ক পিচ্ছিল হয়ে যায়। বিশেষ করে সড়কের কেরানীহাট থেকে মৌলভীর দোকান পর্যন্ত এলাকায় এক থেকে দেড় ইঞ্চি পিচ্ছিল কাদা হয়ে যায়।

এমন পিচ্ছিল কাদার উপর দিয়ে গাড়ি চালাতে গিয়ে অনেকে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। কোনো কোনো গাড়ি সড়ক থেকে খাদে ছিটকে পড়েছে। আবার বেশ কিছু গাড়ি সড়কের উপর ঘুরে যায়।

এতে করে সড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কেরানীহাট থেকে মৌলভীর দোকান পর্যন্ত এলাকায় যান চলাচল অনেকটা বন্ধ ছিল। ফলে সড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। এসময় যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়ে। অনেক যাত্রীকে গাড়ি থেকে নেমে দীর্ঘক্ষণ পায়ে হেঁটে একাধিক গাড়ি পাল্টিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে দেখা গেছে। দুপুরের পর রোদে সড়কের কাদা কিছুটা শুকিয়ে গেলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

সাতকানিয়ার জনার কেঁওচিয়ার বাসিন্দা জহির আহমদ জানান, মাটি ব্যবসায়ীরা দিনে-রাতে মহাসড়কের উপর দিয়ে মাটিভর্তি ট্রাক নিয়েছে। তাদের গাড়ি থেকে ঝরে পড়া মাটির কারণে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ার পর কোনো মাটি ব্যবসায়ীকে রাস্তায় দেখা যায়নি। তাদের উচিত ছিল সড়ক থেকে এসব কাদামাটি অপসারণ করা। প্রশাসনের উচিত মাটি ব্যবসায়ীদেরকে দিয়ে সড়ক থেকে এসব কাদামাটি সরানোর ব্যবস্থা করা।

তিনি আরো জানান, এসব মাটি ব্যবসার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে সাধারণ লোকজনকে তারা নানাভাবে নাজেহাল করে। ফলে এখন কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। প্রশাসনের উচিত আবাদি জমির মাটি কাটা এবং মহাসড়কের উপর দিয়ে নেয়া বন্ধ করা।

সাতকানিয়ার কেরানীহাট এলাকার ড্রাইভার আবদুর রশিদ জানান, বৃষ্টির পর কেরানীহাট থেকে মৌলভীর দোকান পর্যন্ত সড়কটি চাষ দেয়া জমির মতো হয়ে গিয়েছিল। তখন গাড়ি চালানো দূরের কথা, সড়কের উপর দিয়ে পায়ে হাঁটাও মুশকিল হয়ে পড়েছিল। মহাসড়কের উপর দিয়ে মাটি নেয়া বন্ধ করা দরকার। বৃষ্টি সকালে না হয়ে রাতে হলে অনেক যানবাহন দুর্ঘটনায় পতিত হতো। আজও পিচ্ছিল সড়কের উপর দিয়ে চলতে গিয়ে বেশ কিছু গাড়ি সড়ক থেকে ছিটকে পড়েছে। বহু গাড়ি সড়কের উপর ঘুরে গেছে।

এদিকে, ট্রাক থেকে ঝরে পড়া মাটিতে সড়ক পিচ্ছিল হওয়ার বিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিক মাটি ব্যবসায়ীকে মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করেও সাড়া মিলেনি।

সাতকানিয়া ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদুল আলম বলেন, “মাটি ব্যবসায়ীরা বিল থেকে মাটি কেটে ট্রাকে করে ইটভাটায় নেয়ার সময় সড়কের উপর ঝরে পড়ার বিষয়টি সত্য। আবার সড়কের আঁধার মার দরগাহ এলাকায় নির্মাণাধীন স্কেলের জন্য মাটি আনার সময়ও সড়কের উপর পড়েছে। তারপরও মাটি ব্যবসায়ী এবং ইটভাটা মালিকরা দায় এড়াতে পারে না। আমি সমিতির সভা ডেকে ইটভাটা মালিক এবং মাটি ব্যবসায়ীদেরকে বারবার বলেছি যাতে করে মাটি আনার পর প্রতিদিন সড়ক ধুয়ে দেয়।

এভাবে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে সড়ক ধুয়ে দিলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না।বিষয়টি আমি প্রশাসনের নজরেও দিয়েছিলাম। সড়কে মাটির প্রলেপ দেখে মাটি ব্যবসায়ী ও ইটভাটা মালিকদের বার বার অনুরোধ করেছি কিন্তু বিষয়টি তারা আমলে নেয়নি। মাটির প্রলেপের উপর বৃষ্টি পড়ে সড়ক পিচ্ছিল হওয়ার বিষয়ে আমি খুবই লজ্জিত ও দুঃখিত যদিও আমার কোনো ইটভাটায় মহাসড়কের উপর দিয়ে মাটি আনা হয় না।”

দোহাজারী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মোহাম্মদ এরফান জানান, মাটি পরিবহনের কারণে নয়, সড়কের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলে কোনো কোনো জায়গায় ধুলোবালি জমেছিল। আজ সকালে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির ফলে সড়ক কিছুটা পিচ্ছিল হয়েছিল। এতে যানবাহন কিছুটা ধীর গতিতে চলেছে, যানজট হয়নি। আর সড়কের কোথাও কোনো দুর্ঘটনাও হয়নি।

দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ জানান, সড়কে মাটির প্রলেপ এবং বৃষ্টির পর পিচ্ছিল হওয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য হাইওয়ে থানার ওসিকে বলা হয়েছে। এর বাইরে আমাদের আসলে কিছুই করার নাই।

সারাদেশ-এর আরও খবর