স্বস্তি ফিরছে বাজারে

কমেছে মাছ-মুরগি-সবজির দাম

  বিশেষ প্রতিনিধি    01-04-2023    104
স্বস্তি ফিরছে বাজারে

সরকারের নানামুখী উদ্যোগে নিত্যপণ্যের বাজারে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন যে ঊর্ধ্বগতি তাতে কিছুটা ভাটা পড়েছে। যদিও বাজারে এখনো সব পণ্যের দামই সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। তারপরও রমজান শুরুর আগে নিত্যপণ্যের বাজারে যে অগ্নি মূল্য ছিল তা কিছুটা হলেও কমেছে। এতে মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে।

দ্রব্যমূল্যের নিদারুন কষাঘাত থেকে রোজায় সাধারণ মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের বাজার মনিটরিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন। অধিদফতরের অভিযানের ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্য মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করতে পারছে না। বাজারে এখন সব ধরনের পণ্য প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। এর ফলে রোজার শুরুতে যেভাবে দাম বাড়ছিল তা থেমে গেছে। বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম কিছুটা কমেছে এবং অনেকগুলোর দাম স্থিতিশীল রয়েছে।

ব্রয়লার মুরগির দাম কমার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা অবশ্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের। অধিদফতরের মহাপরিচালক এইচ এম সফিকুজ্জামান পোলট্রি খাতের চার বড় প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠক করার পরের দিন থেকেই ব্রয়লার মুরগির দাম কমতে থাকে। রোজা শুরুর আগের দিন গত ২৩ মার্চ রাজধানীর কাওরান বাজারে অধিদফতরের কার্যালয়ে এই বৈঠক হয়। পরবর্তীতে প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অধিদফতরের অভিযান চলমান রয়েছে।

রমজানে দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরার ক্ষেত্রে টিসিবির ট্রাক সেলও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। সাধারণ মানুষ বাজার মূল্যের চেয়ে অনেকটা কমে টিসিবির পণ্য কিনতে পারছে। এতে করে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা রমজানে পণ্য কিনে সংসার চালাতে পারছেন। টিসিবির ট্রাকে তারা ২ লিটার তেল, ২ কেজি ডাল, ১ কেজি চিনি, ১ কেজি খেজুর ও ১ কেজি ছোলা মোট ৫৭০ টাকায় কিনতে পারছেন। বাজারে এসব পণ্যের দাম মান ভেদে ৯৫০ থেকে ১০০০ টাকা। এক্ষেত্রে টিসিবির ট্রাক সেল এই রমজানে সাধারণ মানুষকে অনেকটাই স্বস্তি দিচ্ছে।

অন্য দিকে রোজায় সাধারণ মানুষকে কম দামে পণ্য দিতে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ও ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে রাজধানীতে ২০টি স্পটে কয়েকটি পণ্য বিক্রি করছে। তাদের গাড়িতে গরুর গোশত পাওয়া যাচ্ছে ৬৪০ টাকা কেজি, যা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা। খাশির গোশত প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বিক্রি করছে ৮৪০ টাকা কেজি, বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১৫০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের গাড়িতে ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা ডজন, বাজারে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা ডজন। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে দুধ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি, বাজারে ৯০ টাকা কেজি।

সরকারের এসব উদ্যোগ রমজানে নিত্যপণ্যের বাজারে অনেকটা স্বস্তি এনে দিয়েছে। এ ছাড়া মানুষ তাদের আয় অনুযায়ী প্রয়োজনীয় জিনিসের তালিকায় কাটছাঁট করেছেন। আগে যিনি ১ কেজি চিনি কিনতেন তিনি এখন আধা কেজি কিনছেন। যিনি ২ কেজি গরুর গোশত কিনতেন তিনি এবার ১ কেজি কিনছেন। আবার অনেকে গরুর গোশত কেনা বাদ দিয়েছেন। এরকম প্রয়োজনীয় সব পণ্যের তালিকাতেও কাটছাঁট করে সংসার চালাচ্ছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। এতে করেও বাজারে প্রয়োজনের চেয়ে পণ্যের সরবরাহ বেশি থাকছে। এর ফলে ব্যবসায়ীরা চাইলেও পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করতে পারছে না। বরং উল্টো বাধ্য হয়ে অনেক পণ্যের দাম কমাতে হচ্ছে।

প্রথম রমজানে পণ্যের দামে যে অস্বস্তি শুরু হয়েছিল, তা এখন অনেকটা কেটে গেছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে কমেছে সব ধরনের মুরগি, সবজি ও মাছের দাম। গতকাল রাজধানীর খিলগাঁও রেলগেট বাজার, মালিবাগ ও শান্তিনগর বাজারে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা থেকে ২১০ টাকা কেজি যা গত শুক্রবার ২৮০ টাকা পর্যন্ত কেজি বিক্রি হয়েছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কমার ফলে সোনালি মুরগির দামও কমছে। গত সপ্তাহে যে মুরগি ৪০০ টাকা কেজি ছিল তা গতকাল বিক্রি হয়েছে ৩২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা কেজি। এর পাশাপাশি দেশি মুরগির দামও কেজিতে ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা কমে ৪৫০ থেকে ৪৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

এর প্রভাবে ৪০০ টাকা ছুঁইছুঁই করা সোনালি মুরগির দামও কমে এখন ৩২০-৩৩০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি দেশি মুরগির দাম কেজিপ্রতি ৩০-৫০ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৭০-৫০০ টাকা কেজি দরে।

খিলগাঁও রেলগেট বাজারে মুরগি বিক্রেতা কালাম বলেন, মুরগির বাজার পড়তি। করপোরেট কোম্পানিরা ১৯০ টাকায় মুরগি বাজারে ছাড়ার (বিক্রি করার) পর থেকে কোনো সমস্যা নেই। এরপর গত দুদিন থেকেও বাজার কম ছিল। পাইকারি ১৮০ টাকাও গেছে।

এদিকে বাজারে মাছের দামও প্রথম রোজার তুলনায় কেজি প্রতি ২০-৫০ টাকা কম দেখা গেছে। এছাড়া সরবরাহ বেশি হওয়ায় মাছের দরও কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একই বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আলিম উদ্দিন বলেন, প্রথম রোজায় সবকিছুর দাম তরতর করে বেড়েছে। মানুষ কিনেছেও বেশি। এখন যে চাহিদা তার চেয়ে বাজারে প্রচুর মাছ এসেছে। যে কারণে দাম আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। যতদিন যাবে মাছের চাহিদা কমবে। ঈদের মধ্যে রাজধানীতে মাছের চাহিদা প্রায় থাকেই না। সে কারণে এখন অনেকে মাছ বিক্রি করে দিচ্ছে।

রোজার আগে বাজারে যে রুই মাছ ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে তা গতকাল বিক্রি হয়েছে ২৬০ টাকা থেকে ২৮০ টাকা কেজি। যে বোয়াল মাছ ৭০০ টাকা কেটি ছিল তা ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। যে চিংড়ি রোজার আগের দিন ৭০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে তা গতকাল ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তেলাপিয়া পাঙ্গাস এগুলোও কেজি ২০০ টাকা ছাড়িয়েছিল, গতকাল তা ১৬০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।

অন্যদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দামও ১০ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। রোজার শুরুতে ভালো মানের বেগুন ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে সে বেগুন গতকাল ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। ৮০ টাকার শসা এখন ৫০ টাকা হয়েছে। ৬০ টাকা লেবুর হালি এখন ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রমজানের প্রথমদিন বেগুন, লেবু, শসার মতো ইফতারে প্রয়োজনীয় পদগুলোর দাম অস্বাভাবিক বেড়েছিল। এখন সেগুলোর দাম কিছুটা কমলেও বাজারে বেশ চড়া অন্যান্য পদের সবজির দাম। খোদ বিক্রেতারাই বলছেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কিছুটা কমলেও স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দাম এখনো বেশি।

পেঁপে আর আলু ছাড়া বাজারে ৫০-৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। অনেক পদের দাম ১০০ টাকায় আটকে রয়েছে। এখনও সাজনা, বরবটি ও কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। পটল, ঢ্যাঁরস, ঝিঙা, চিচিংগা, বেগুন, শসার দাম ৬০-৭০ টাকা। আর শিম, মুলা ও টমেটো প্রতিকেজি ৫০-৬০ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন, দাম অনেক বেশি ছিল, এখন কমতে শুরু করেছে। রোজার শেষে একদম কমে আসবে। কারণ ঈদে সবজির চাহিদা থাকে না।

এদিকে বাজারে অপরিবর্তিত দেখা গেছে, গরুর গোশতের দাম। বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজি দরে। সবকিছুর দাম কমে গেলেও গোশতের দাম কমেনি। এটা এখন আর কমার সম্ভাবনাও নেই। কারণ সামনে ঈদ। ঈদের সময় চাহিদা বাড়ায় দাম বরং বাড়ানোর পাঁয়তারা করবে গোশত ব্যবসায়ীরা। বাজারে কিছুটা কমেছে ফার্মের ডিমের দাম। রোজার শুরুতে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা ডজন ছিল তা এখন ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে।

জাতীয়-এর আরও খবর