গ্রেফতার দুজনের দায় স্বীকার, খুনের কারণ অজানা

বঙ্গোপসাগরে ট্রলারে ১০ খুন

  বিশেষ প্রতিনিধি    26-04-2023    80
গ্রেফতার দুজনের দায় স্বীকার, খুনের কারণ অজানা

কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক সমুদ্র উপকূলে টেনে আনা ডুবন্ত ট্রলার থেকে ১০ মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় চারজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় ৫০-৬০ জনকে অভিযুক্ত করে হত্যা মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্তসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

নিহত ১০ জনের একজন ট্রলার মালিক শামসুল আলমের স্ত্রী রোকেয়া আকতার বাদী হয়ে মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে কক্সবাজার সদর থানায় মামলাটি করেন।

সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজুল ইসলাম। গ্রেফতার দুজন ১০ খুনের সঙ্গে জড়িত দাবি করে এসপি বলেছেন, কী কারণে তাদের হত্যা করা হয়েছে তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি। তাদের রিমান্ডে নিয়ে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

গ্রেফতার দুজন হলেন কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়নের সাইরার ডেইল এলাকার মুহাম্মদ ইলিয়াছের ছেলে বাইট্টা কামাল (৪৫) ও হোয়ানক ইউনিয়নের মোহরাকাটা গ্রামের মৃত মকবুল আহমদের ছেলে নরুল করিম ওরফে করিম সিকদার মাঝি (৫৫)। তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত আগের কোনো মামলার নথির সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গ্রেফতার দুজনের দায় স্বীকার, খুনের কারণ অজানা

সংবাদ সম্মেলনে এসপি মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ভাসমান ট্রলারে অর্ধগলিত ১০ মরদেহের রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ চলছে। প্রথাগত পদ্ধতি ব্যবহার করে পুলিশ ছয় মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত করেছে। স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তরও করা হয়েছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাকি চার মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে। মরদেহগুলো কক্সবাজার সদর হাসপাতালের হিমাগারে রেখে ডিএনএ নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ঘটনার পর পুলিশের অন্যান্য ইউনিটের পাশাপাশি জেলা পুলিশের পাঁচটি বিশেষ চৌকস টিম অপরাধীদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করে। টানা ৪৮ ঘণ্টার অভিযানে সোর্স ও গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাইট্টা কামাল ও করিম সিকদারকে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তারা এজাহারনামীয় ১ ও ৪ নম্বর আসামি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার সত্যতা পাওয়া গেছে। তাদের আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড আবেদন করা হবে।

এসপির ভাষ্যমতে, তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে জেলা পুলিশের পাঁচটি টিম এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চালাচ্ছে। এর মধ্যে নিহত শামসুল আলম মাঝির সঙ্গে পূর্বশত্রুতা, নিহতরা জেলে নাকি জলদস্যু, নাকি মাদকের লেনদেন নিয়ে তারা খুন হয়েছেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ ক্ষতিগ্রস্ত ট্রলার মালিক নিহত শামসুল আলমের নামে হত্যা ও মাদক মামলা রয়েছে। তার সহযোগী হিসেবে পরিচিত খুন হওয়া নুরুল কবিরেরর নামে অস্ত্র ও ডাকাতি প্রস্তুতির মামলার তথ্য মিলেছে।

এসপি বলেন, গ্রেফতার দুজন হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন। তবে কী কারণে জঘন্য এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে তা এখনো অজানা রয়েছে। হত্যার কারণ জানান চেষ্টা চলছে।

তবে, বাবু সানি নামের এক জেলে বলেন, দুই সপ্তাহ আগে করিম সিকদার মাঝির ট্রলার, বাইট্যা কামাল ও তার আরেক ভাইয়ের ট্রলার এক হয়ে গভীর সমুদ্রে শামসুল আলমের ট্রলারকে জলদস্যুর ট্রলার উল্লেখ করে ধাওয়া করেন। সেসময় ওই তিন ট্রলারের মাঝি আমার ট্রলারের সহযোগিতা চান। কিন্তু তীরে ফেরার তাড়ায় আমাদের ট্রলারটি ওই তিন ট্রলারের সঙ্গে যোগ না দিয়ে ঘাটে ফিরে আসে। সেই থেকেই শামসুল আলমের ট্রলারটি মাঝি-মাল্লাসহ খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।

রোববার (২৩ এপ্রিল) কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক পয়েন্টে ডুবন্ত ট্রলারের কোল্ড স্টোরেজ থেকে শামসুল আলমসহ ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই আগে কখনো সাগরে যাননি বলে দাবি করেছেন নিহতদের স্বজনরা।

সারাদেশ-এর আরও খবর