যৌবন ইবাদতের শ্রেষ্ঠ সময়

মোহাম্মদ হাসিব উল্লাহ

  বিশেষ প্রতিনিধি    05-05-2023    109
যৌবন ইবাদতের শ্রেষ্ঠ সময়

মানব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হচ্ছে, যৌবনকাল। এ সময়কে, আল্লাহ প্রদত্ত অফুরন্ত নেয়ামতও বলা চলে। এ সময় প্রতিটি মানুষের চিন্তার বিকাশ ঘটে এবং মানব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনও ঘটে থাকে।

এ জন্য এ বয়সে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে বুদ্ধিবৃত্তিক হতে হবে। যেন ইসলামবিরোধী কোনো কাজের প্রতি স্বীয় অন্তর আকৃষ্ট না হয়ে পড়ে। কেননা, যৌবনকালের সদ্ব্যবহার প্রতিটি মুসলিম যুবক-যুবতীর অবশ্য কর্তব্য। কারণ কেয়ামত দিবসে যেসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে তন্মধ্যে যৌবনকাল অন্যতম।

যেমন নবিজি (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামত দিবসে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় আল্লাহতায়ালার কাছ থেকে সরতে পারবে না। তার জীবনকাল সম্পর্কে, কীভাবে অতিবাহিত করেছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কি কাজে তা বিনাশ করেছে; তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা থেকে তা উপার্জন করেছে এবং তা কী কী খাতে খরচ করেছে এবং সে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল সে মোতাবেক কী কী আমল করেছে।’ (জামে আত-তিরমিজি : ২৪১৬ নং)।

এজন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেই যৌবনকালের সদ্ব্যবহার করার জন্য উম্মাহর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আল্লাহ্ প্রদত্ত জীবনব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ অনুসরণের তাগিদ দিয়েছেন। কেননা, আল্লাহ্ মানবজাতিকে প্রেরণ করেছেন তার ইবাদত ও নির্দেশিত পথে চলার জন্য। যেমন আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি সৃষ্টি করেছি জিন ও মানুষকে এ জন্য যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে।’ (সূরা আয-যারিয়াত : ৫৬নং)।

কিন্তু, সমকালীন যুব সমাজের একাংশ ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে ভিন্ন ধারার উৎসব ও সংস্কৃতি লালনে মগ্ন হয়ে পড়ছে। প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে চারিত্রিক অধঃপতন ঘটছে। যা নেহাতই দুঃখজনক। অনেকেই এহেন প্রকার কর্মের দ্বারা অজান্তেই ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে পড়ছে। কারণ, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ : ৪০৩১)।

শুধু তাই নয়, ইসলাম ছাড়া ভিন্ন ধারার সংস্কৃতি গ্রহণে ও সব ধরনের অশ্লীল কর্মকে আল্লাহতায়ালা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছেন। এমনকি যুব সমাজের মধ্যে যারা এসব কর্মের প্রচার ও প্রসার করে, তাদের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে কঠোর হুঁশিয়ারিমূলক আয়াত উল্লিখিত রয়েছে। যেমন আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে মর্মন্তুদ শাস্তি এবং আল্লাহ জানেন, তোমরা জাননা।’ (সূরা নূর : ১৯নং)।

এজন্য মুসলিম জাতির সবার প্রতি ইলমে দ্বীন তথা ইসলামি শরিয়তের জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। যেন সবাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সব কাজে বৈধ-অবৈধ নির্ণয় করে চলতে পারে। হারাম তথা অবৈধ কাজে কেউ যেন জড়িয়ে না পড়ে। যেমন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির ওপর ফরজ।’ (সহিহ তারগিব ওয়াত তাহরিব : ৭২)।

এমনকি যুব সমাজের অন্তর্ভুক্ত যেসব যুবক ও যুবতী তাদের যৌবনকাল আল্লাহর ইবাদতে কাটাবে এবং হারাম কাজ থেকে দূরে থাকবে, তাদের জন্য রয়েছে মহাসুসংবাদ। যা হাদিসে নববি (সা.) দ্বারা স্বীকৃত। অর্থাৎ, কিয়ামতের মাঠে হিসাব-নিকাশের দিনে বিভীষিকাময় মুহূর্তে আল্লাহর আরশের নিচে ছায়ায় স্থান পাবে। উল্লেখ্য, ওইদিন আল্লাহর আরশের নিচের ছায়া ব্যতীত কোথাও ছায়া থাকবে না।

সর্বত্র রৌদ্রের কঠোর তাপ বিরাজমান থাকবে। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে দিন আল্লাহর (আরশের) ছায়া ব্যতীত কোনো ছায়া থাকবে না, সে দিন আল্লাহতায়ালা সাত ধরনের মানুষকে সে ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। যথাক্রমে (১) ন্যায়পরায়ণ শাসক, (২) যে যুবক আল্লাহর ইবাদতের ভেতর গড়ে উঠেছে, (৩) যার অন্তরের সম্পর্ক সর্বদা মসজিদের সঙ্গে থাকে, (৪) আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যে দুব্যক্তি পরস্পর মহব্বত রাখে, উভয়ে একত্রিত হয় সেই মহব্বতের ওপর আর পৃথক হয় সেই মহব্বতের ওপর, (৫) এমন ব্যক্তি যাকে সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী (অবৈধ মিলনের জন্য) আহ্বান জানিয়েছে। তখন সে বলেছে, আমি আল্লাহকে ভয় করি।

(৬) যে ব্যক্তি গোপনে এমনভাবে সদকা করে যে, তার ডান হাত যা দান করে বাম হাত তা জানতে পারে না, (৭) যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আল্লাহর ভয়ে তার চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।’ (সহিহ বুখারি : ১৪২৩নং)।

এজন্য প্রতিটি মানবের জীবনে যৌবনকাল গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। পাশপাশি, রাসূলুল্লাহ (সা.) মুসলিম উম্মাহকে যে পাঁচটি বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে বলেছেন তন্মধ্যে যৌবনকাল অন্যতম। কারণ, আল্লাহর দেওয়া এ নেয়ামতের অর্থাৎ যৌবনকালকে আল্লাহর পথে ব্যয় করা সব মুসলিম যুবক-যুবতীর অবশ্য কর্তব্য।

যেমন জনৈক ব্যক্তিকে উপদেশ দিতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পাঁচটি বস্তুকে পাঁচটির পূর্বে গনিমত জেনে মূল্যায়ন করো: বার্ধক্যের পূর্বে তোমার যৌবনকে, অসুস্থতার পূর্বে তোমার সুস্থতাকে, দারিদ্র্যের পূর্বে তোমার ধনবত্তাকে, ব্যস্ততার পূর্বে তোমার অবসরকে এবং মরণের পূর্বে তোমার জীবনকে।’ (সহিহুল জামে : ১০৭৭নং)।

তবে অশ্লীলতা, বেহায়পনা ও ইসলামি মূল্যবোধবিরোধী কর্মকাণ্ড যুবসমাজ থেকে দূর করতে হলে, সবাইকে সচেতন বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি নিজের সন্তান, পরিবার, আত্মীয়স্বজনসহ সবাইকে এ উৎসব পালন সম্পর্কে ইসলামি শরিয়তের অভিমত অবহিত করা এবং এর কুফল সম্পর্কে সতর্ক করা, সবার কর্তব্য।

তবেই দুনিয়াবি জীবনে যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টি, রহমত, শান্তি ও কল্যাণ লাভ সম্ভব হবে, তেমনি আখেরাতেও মহান রবের মাগফিরাত অর্জন সম্ভবপর হবে। কেননা আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, ‘হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার পরিজনকে রক্ষা কর আগুন হতে।’ (সূরা আত-তাহরিম : ৬নং)। আল্লাহতায়ালা সবাইকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুক, আমিন।

ধর্ম ও জীবন-এর আরও খবর