স্বর্ণ ব্যবসার আড়ালে চলছিল চোরাচালান। আর চোরাচালানের অর্থ হচ্ছিল পাচার। যে প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যবসা চালানো হচ্ছিল, সেটির নাম ‘ওয়েব ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’। প্রকৃত অর্থে এই নামে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। ভুয়া লাইসেন্সে একটি চক্র চালাচ্ছিল চোরাচালান ও মুদ্রা পাচার কার্যক্রম।
ভুয়া লাইসেন্সে অফিসের ঠিকানা হিসাবে দেওয়া হয় বাসার ঠিকানা। ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল-পাঁচ বছরে চক্রটি প্রায় ২৫ কোটি টাকা পাচার করেছে। অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সংশ্লিষ্ট সূত্র যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সিআইডি সূত্র জানায়, নিজের বোনজামাইকে নিয়ে একটি চক্র গড়ে তুলেছে বিধান চন্দ্র সরকার (৩৪)। বোনজামাইয়ের নাম কার্তিক চন্দ্র সরকার (৫৩)। বিধানের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। আর কার্তিকের বাড়ি ঢাকার আশুলিয়ায়। অর্থ পাচারের অভিযোগে ২০২০ সালে কার্তিক বগুড়ায় হাতেনাতে ধরা পড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে।
এরপর থেকে পুলিশের খাতায় পলাতক বিধান। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে তিনি চোরাচালান ও অর্থ পাচার কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। একটি পাচারের ঘটনায় বিধানের কাছ থেকে ৬২ হাজার ১৫০ ইউএস ডলার এবং ৫৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় বগুড়ার শেরপুর থানায় দায়ের হওয়া মামলায় বিধান ও কার্তিকের বিরুদ্ধে সোমবার বগুড়ার আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এসআই জহির রায়হান যুগান্তরকে বলেন, একটি যৌথ অভিযানে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মামলা করেন সিআইডির এসআই আশিকুর রহমান। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে চার্জশিট দিয়েছি। এর বেশি আমি কিছু বলতে পারব না। এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কথা বলতে পারেন।
সিআইডির উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতার কার্তিকের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, তারা সীমান্ত এলাকা থেকে ডলার সংগ্রহ করে ঢাকায় বিক্রি করে। তবে সিআইডির তদন্তে উঠে আসে, তারা দুবাইসহ বিভিন্ন দেশ থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে স্বর্ণ এনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে।
স্বর্ণ বিক্রির টাকার পরিমাণ বেশি হওয়ায় তা বহন করতে তাদের অসুবিধা হতো। তাই ওই টাকাকে তারা ডলারে রূপান্তর করে। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। চোরাচালান ও অর্থ পাচারের মাধ্যমে আসামিরা বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন।
চার্জশিটে সবকিছুই উল্লেখ করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট ৬২ হাজার ১৫০ ডলার এবং ৫৭ হাজার টাকা উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হওয়ায় চার্জশিটে কেবল ওই বিষয়টিই প্রমাণ করা হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে আরও মামলা হতে পারে।
বগুড়ার শেরপুর থানায় করা মামলার এজাহারে সিআইডির এসআই আশিকুর রহমান উল্লেখ করেন, ২০২০ সালের ১ জুন বগুড়ার শেরপুর থানাধীন গাড়ই বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, র্যাব-১২ এবং বগুড়া জেলা পুলিশ। অভিযানে টাকা ও ডলারসহ কার্তিক ধরা পড়লেও বিধান পালিয়ে যান। চোরাচালান ও অর্থ পাচারের মাধ্যমে এ দুজন বিপুল অর্থসম্পদের মালিক হয়েছেন।