অভিযানের পরেও কটেজে পতিতা ও মাদক ব্যবসা: নিয়মিত চাঁদা নেন যারা

  বিশেষ প্রতিনিধি    11-09-2022    100
অভিযানের পরেও কটেজে পতিতা ও মাদক ব্যবসা: নিয়মিত চাঁদা নেন যারা

কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের বিপরীত পাশে লাইট হাউজস্থ রয়েছে কটেজ জোন। এই জোনে চিহ্নিত কয়েকটি কটেজে নিয়মিত চলে অপরাধ কার্যক্রম। বিশেষ করে পতিতা মজুদ রেখে যৌন ব্যবসা ও কটেজ রুমে মাদক সেবন চলে প্রতিনিয়ত। দীর্ঘদিন ধরে এসব অপরাধ কার্যক্রম চললেও বন্ধের কোন লক্ষণ নেই। বরং দিনদিন কয়েকজন পতিতা ব্যবসায়ীদের বিচরণ বেড়েই যাচ্ছে। তবে স্থানীয় কিছু চিহ্নিত অপরাধীদের সাপ্তাহিক চাঁদা দিয়েই কটেজ জোনে চলছে পতিতা ব্যবসা ও মাদক সেবনের আড্ডা। এছাড়া আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে কয়েকজন ব্যক্তি নেন চাঁদা। এমনকি কথিত সাংবাদিক নামধারী কয়েকজন ব্যক্তি পতিতা মজুদ রাখা কটেজে গিয়ে নিয়মিত হানা দেন বলেও জানা গেছে। নেন টাকাও। টাকা না দিলে নিজস্ব ফেসবুক/টিভিতে প্রচার করার কৌশলী হুমকি দেন বলেও জানা গেছে। এমন কয়েকজন কথিত সাংবাদিক পরিচয় দানকারীদের নামও পাওয়া গেছে। খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, কটেজ জোনে অপরাধ কার্যক্রম চলে আমীর ড্রীম কটেজ, পুরাতন ঢাকার বাড়ি কটেজ, নিউ ঢাকার বাড়ি কটেজ, সী—প্লাওয়ার কটেজ ও সী—টাউন কটেজসহ প্রায় ৭টি কটেজে। এসব কটেজ গুলোতে প্রতিনিয়ত মজুদ রাখা হয় পতিতা (যৌনকর্মী)। এক প্রকার পতিতাদের ডেরা হিসেবে পরিচিত কটেজ গুলো। নিয়মিত যাতায়ত খদ্দরদের। কটেজের আশপাশে ও অলিগলিতে রয়েছে তাদের নিজস্ব দালাল। শুধু মাত্র পতিতা মজুদ রেখে ব্যবসা করার জন্য কটেজ গুলো ভাড়া নেন চিহ্নিত পতিতাদের সদ্দর্াররা। এরমধ্যে আমীর ড্রীম কটেজ ভাড়া নেন কক্সবাজার শহরের আলোচিত পতিতা ব্যবসায়ী লালদিঘীর পাড়ের রোস্তম। লালদিঘীর পাড়েও রোস্তমের আরেকটি হোটেল রয়েছে। সেখানেও চলে পতিতা ব্যবসা। নতুন করে আমীর ড্রীম ভাড়া নেন রোস্তম। জমজমাটভাবে আমীর ড্রীমে চালিয়ে যাচ্ছে পতিতা ব্যবসা। তার কটেজে প্রতিনিয়ত ১৫ থেকে ২০ জন পতিতা অবস্থান করে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। এই কটেজের রুমে চলে মাদক সেবনও। পুরাতন ঢাকার বাড়ি কটেজ পরিচালনা করেন আরেক পতিতা ব্যবসায়ী আলোচিত আব্বাস। আব্বাস কটেজ জোনের আলোচিত নাম। তাকে পতিতাদের কিং হিসেবেও চেনেন অনেকেই। দীর্ঘদিন ধরে নিজ কটেজে পতিতাদের ডেরা বানিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে আব্বাস। পতিতা ব্যবসা জমজমাট হওয়ায় নিউ ঢাকার বাড়ি নামে আরেকটি কটেজ ভাড়া নেন আব্বাস। যৌন ব্যবসার পরিধি দিন দিন বাড়িয়ে দেন তিনি। দুই কটেজে পতিতা মজুদ রেখেই চলছে অপরাধ কার্যক্রম। সী—প্লাওয়ার কটেজ পরিচালনা করছে রহিম নামের আরেক পতিতা মজুতদার। সেখানেও চলছে সমান অপরাধ। প্রশাসনের অভিযান ভাটা পড়ায় তারা দিন দিন অপরাধের পরিমাণ বাড়িয়েছে। এছাড়া সী—টাউনে চলছে জমজমাট যৌন ব্যবসা। সেখানেও পতিতাদের ডেরা বানিয়ে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।এদিকে এসব কটেজের অপরাধ ধামাচাপা দিতে তারা স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তিকে দেন নিয়মিত চাঁদা। সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যার পর অপরাধ আড়াল করতে চাঁদা দেন এসব কটেজের পতিতা ব্যবসায়ীরা। আর এসব কটেজে হান দেন শহরের চিহ্নিত অনেক সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারীরা। নেন চাঁদাও। এসব কটেজ থেকে নিয়মিত চাঁদা নেন— লাইট হাউজ ও সৈকত পাড়া এলাকার নেজাম, সোহেল, মনসুর, শুক্কুর, নাজিম উদ্দিন, আমান, খালেক, সাদেক, খোকা, সাকিব ও সেলিম। চাঁদা নিতে যান বাহারছড়া এলাকার আলোচিত ছিনতাইকারী ও সন্ত্রাসী আশিক, আশিকের ভাই আরিফ, জুনাইদ, মোবারক, বাইট্টা সুমন ও সিরাজ এবং পাহাড়তলী এলাকার নাছির। কটেজ জোনে কিছুদিন পরপরেই হানা দিয়ে চাঁদা নিতে যান শাহিন, জসিম, খোরশেদ, সাইফুল, স্বপন কান্তি। কয়েকজন পতিতার দালাল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এছাড়া অনেক কটেজ ভাড়াটিয়াও এসব অপরাধীদের নিয়মিত চাঁদা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পতিতা ব্যবসায়ে ঝামেলা না করার জন্য তাদের চাঁদা দেন বলে জানা গেছে। কয়েকজন পতিতাদের দালাল বলেন, সব কটেজে অপরাধ হয় না। চিহ্নিত প্রায় ৬ থেকে ৭টি কটেজে নিয়মিত পতিতা ব্যবসা চলে। পতিতা ব্যবসার জন্য এসব কটেজ ভাড়া নেওয়া হয়েছে। এসব কটেজে কোন পর্যটক রাত্রী যাপন করেন না। খদ্দরের টার্গেট সবসময় এসব কটেজে। পতিতা ব্যবসা করা প্রতিটি কটেজে সবসময় ১২ থেকে ২০ জন পর্যন্ত যৌনকর্মী মজুদ রাখা হয়। সন্ধ্যার পর চলে জমজমাট ব্যবসা। এক কটেজের পিছনে ৬ থেকে ৭ জন করে দালালও রয়েছে বলে তারা জানান। কয়েকজন কটেজ ব্যবসায়ী বলেন, অনেক চিহ্নিত অপরাধীরা কটেজে চাঁদা নিতে আসে। চাঁদা না দিলে রুমে ঢুকে পতিতাদের হুমকি দেন। বিভিন্ন ঝামেলা তৈরি করে। তাই নিয়মিত চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করতে হয়। লাইট হাউজ, সৈকত পাড়া, বাহারছড়া ও পাহাড়তলীর চিহ্নিত অনেকেই চাঁদা নেন। এরমধ্যে অনেকেই শীর্ষ সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারী ও মাদক সেবনকারী। অনেকেই আবার ইয়াবা সেবনের জন্য রুমও নেন। কথিত সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কয়েকজন ব্যক্তিও নিতে যান চাঁদা। এমনকি ট্যুরিস্ট পুলিশের একসদস্যও নিয়মিত চাঁদা নিতে যাওয়ার জনশ্রুতি রয়েছে কটেজ জোনে। পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে— ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার লাইট হাউজস্থ কটেজ জোনে অভিযান চালিয়ে অনেক পতিতা ও খদ্দরদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। মামলা দায়ের করা হয়েছে কটেজ ভাটাড়িয়া ও মালিকদেরও। এসব অপরাধ বন্ধ করতে পুলিশ সবসময় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত সময়ে সেখানে আবারো অভিযান চালানো হবে।

সারাদেশ-এর আরও খবর