বাঁকখালী নদীর অবৈধ দখলমুক্তির অভিযান জোরদার করুন : জাসদ

  বিশেষ প্রতিনিধি    06-03-2023    202
বাঁকখালী নদীর অবৈধ দখলমুক্তির অভিযান জোরদার করুন : জাসদ

কক্সবাজারের প্রাণ বাঁকখালী নদীর তীর দখল করে গড়ে তোলা সকল অবৈধ স্থাপনাসহ জেলা শহরের অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং পবিত্র রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় পণের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহনের দাবীতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারক লিপি প্রদান ও মানববন্ধন করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদ, কক্সবাজার জেলা।

গতকাল ৫ মার্চ সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে জেলা জাসদের উদ্যোগে মানববন্ধন ও সমাবেশ জাসদ জেলা সভাপতি নইমুল হক চৌধুরী টুটুল এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন— জাসদ কক্সবাজার জেলা সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, যুগ্ম সম্পাদক মোঃ হোসাইন মাসু, সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট রফিক উদ্দিন চৌধুরী, দফতর সম্পাদক ও জাতীয় যুব জোট সভাপতি অজিত কুমার দাশ হিমু, জনসংযোগ সম্পাদক মোঃ আবু তৈয়ব, সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক মো: মীর মোশারফ হোসেন, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মোঃ আবদুর রশিদ, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আবদুল জব্বার, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক কায়সার হামিদ, স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক নুরুল আলম সিকদার, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক প্রদীপ দাশ, কার্যনিবার্হী সদস্য মোঃ জাকারিয়া, আবুল হাসেম, মোঃ আলী হাসান, একরামুল হক কন্ট্রাক্টার, জাতীয় যুব জোট এডহক কমিটির সদস্য নুরুল হক, মুন্নি বেগম, জাতীয় যুব জোট কক্সবাজার শহর কমিটির সভাপতি ওসমান গণি, সাধারণ সম্পাদক মোঃ বাবুল, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কক্সবাজার সদর উপজেলা শাখার সভাপতি মোঃ শাহীন প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন— যে নদীর তীরে গড়ে উঠেছিলো পর্যটন শহর কক্সবাজার, সেই বাঁকখালী নদীর প্রাকৃতিকভাবে গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় গড়ে ওঠা নদীর বিস্তৃত তীরভূমি দখল করে নিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের অনেক প্রভাবশালী কতিপয় নেতৃবৃন্দ সহ সমাজের নানাস্তরের প্রভাবশালী, ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরা।

ফলে দেশের উচ্চ আদালত বাঁকখালী নদী তীর থেকে সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর জায়গা নদী সৃজনের জন্য ফেরত দিতে আদেশ দেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের। আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন গত ২৮ ফেব্রুয়ারী ও ০১লা মার্চ দুদিন ব্যাপক অভিযান চালিয়ে প্রায় সাড়ে ৫শত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে দখল হয়ে যাওয়া প্রায় ৪শত একর জায়গা উদ্ধার করে। তাই কক্সবাজার জেলা জাসদের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ইলেক্ট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ার সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। কিন্তু অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় উচ্ছেদ অভিযান চলার পরপরই উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করতে নানামুখী চক্রান্ত—ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতা শুরু হয়ে যায়। প্রশাসনের উপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।

বক্তারা আরো বলেন— আওয়ামী লীগ দলীয় কক্সবাজার রামু আসনের সংসদ সদস্য প্রকাশ্যে ও সরাসরি উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে মাঠে—ময়দানে বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছেন এবং জেলা প্রশাসনের উপরে মানষিকচাপ সৃষ্টি করছেন উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য। জেলা প্রশাসন দুইদিন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার পর বর্তমানে তা বন্ধ রেখেছেন। এতে করে প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযানের ব্যাপারে জনমনে নানারকম প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এদিকে বাঁকখালী নদীর বাংলাবাজার থেকে শুরু করে জেলা শহরের উত্তর নুনিয়াছড়া পর্যন্ত নদীর তীরভূমিতে শত শত অবৈধ স্থাপনা আজো পর্যন্ত বিদ্যমান। জেলা নদী রক্ষা কমিটি, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিআইডব্লিউটিএ সহ সরকারী বিভিন্ন সংস্থার মাঠ পর্যায়ে জরিপ করে বাঁকখালী নদীর অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরী করেছে। যে তালিকায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত শিবিরের প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দদের নামও রয়েছে। তাদের অবৈধ স্থাপনা এখনো উচ্ছেদ করা হয়নি।

পাশাপাশি একটি চিহ্নিত ভূমিদস্যূচক্র রাজনৈতিক নেতাদের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় হোটেল—মোটেল অঞ্চলের সুগন্ধা সংযোগ সড়কে সরকারী জমি দখল করে শতকোটি টাকা মূল্যের ড্রাগন মার্কেট এবং তৎসংলগ্ন আরো অনেক সরকারী জমি দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তুলেছে শুটকী মার্কেট, রেস্তেঁারা, প্রসাধনীর মার্কেটসহ অন্যান্য স্থাপনা। কক্সবাজার জেলা শহরে ক্ষমতার জোরে সরকারী ভূমি দখল করে ওইরকম অনেক স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে। বাঁকখালী নদীর তীরভূমিসহ কক্সবাজারে সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সরকারী জমিগুলো পুনরুদ্ধার করার জন্য টাস্কফোর্সের অভিযান জোরদার করার জোড়ালো দাবী জানান।

পাশাপাশি পবিত্র রমজান মাস আসলেই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে যায়। একশ্রেণীর অতি মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী চক্র নানারকম ফন্দিফিকির করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। তারা অবৈধভাবে পণ্যের মজুদ গড়ে তুলে তা প্রয়োজন ও চাহিদা মতো সরবরাহ না করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে পণ্যের দাম বাড়িয়ে ফেলে। তাই জাসদ মনে করে— বাজার স্থিতিশীল রাখতে সুষ্ঠ প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা এবং বাজার তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করার কোন বিকল্প নেই।

সারাদেশ-এর আরও খবর